হিরক রাজের শিক্ষা মন্ত্রীর সেই অমোঘ বচন, "জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।" একবার এই সত্য হৃদয়ঙ্গম করলে, তার সিদ্ধি রোধ করে কে?
চতুর্দিকে কুরু-পান্ডবের সাঁজোয়া গাড়ি দাঁড়িয়ে, সারি সারি। বেচারা অর্জুনের দাঁত কপাটি লেগে যাবার জোগাড়। অস্ত্র-শস্ত্র ফেলে দিয়ে নন্ প্লেয়েইং ক্যাপ্টেনের শরণাপন্ন।
- স্যার, এরকম হবে তো ভাবিনি। আমি পারবো না স্যার।
সোজা কথায় হাত-পা পেটে মধ্যে সেঁধিয়ে যাওয়া, আর কি? কিন্তু এত কান্ড করে, যিনি একটু একটু করে যুদ্ধের গুটি পাকিয়ে এনেছেন, তার কি হবে? সভ্যতার প্রতিটি ইনিংসে অবতীর্ণ হবেন বলে যিনি কথা দিয়েছেন, অর্জুনের মতো বালখিল্যের কারণে ওয়াক ওভার দিয়ে দেবেন? এমনটা হলে টি-আর-পির দফারফা। অগত্যা শুরু হল জ্ঞান বপন আর জ্ঞান উন্মেষ। মায়ার বাঁধন কাটিয়ে, সার উপলব্ধি। তুমি কেউ নও ভাই, কেবল নিমিত্ত মাত্র। কোন ওভারে কটা নো বল, প্রথম বলে চার হবে না শূণ্য- সব আগে থেকেই নির্ধারিত। অগত্যা বেচারা জনগণ যুদ্ধে মন দেয়। পাল্টা প্রশ্ন বারন আছে।
- স্যার যদি সব আগে থেকেই সেট করা থাকে, তবে আর আমাদের টানাটানি কেন?
জানা আর অজানার এই সূক্ষ্ম সুতোর সীমানা, আবহমান কালের। জ্ঞানবৃক্ষের ফলের স্বাদ কেমন? তা জানার অত কৌতুহল না থাকলেই ল্যাঠা চুকেই যেত।
পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র অজানা। প্রশ্ন জানার পর উত্তর অজানা। সেখানে অবশ্য কিছু বিপদভঞ্জন বন্ধু উপস্থিত। জানালার পাশ অথবা শতাব্দী প্রাচীন ইউরিনালের ভিতর এত দিস্তা দিস্তা সাহায্যলিপি, সে তো সেই পরমারাধ্য "ফ্রেন্ড ইন নিড"-এর সমতুল।
এক তথাকথিত বিখ্যাত কলেজ হস্টেলের ঘরে একটি বালক অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে গাঁতিয়ে চলেছেন। কোন এক আপাত দূরুহ জ্ঞানান্বেষণে। দৃঢ়কল্প চোখে কেবল এবং কেবলমাত্র পরীক্ষারূপী পাখির চোখ। সেখানে জানার অবকাশ যত, তার বহুগুণ নম্বর পাবার অভিলাষ। অপর একটি অকালপক্ক আঁতেল বালক সহপাঠী, সেই ঘরে প্রবেশ করলে, আমাদের পড়ুয়া ছাত্রটি সামান্য বিরক্ত হয়। এই আঁতেল সম্প্রদায় যুগে যুগে অবতীর্ণ হয়। তাদের না থাকে চক্ষুলজ্জা, না থাকে পরকাল বা উত্তর-ছাত্র পর্বের ভাবনা। পরীক্ষা ও তার প্রস্তুতির পরোয়া না করে উচ্চৈঃস্বরে আবৃত্তি শুরু করে। নজরুলের 'বিদ্রোহী'। কিছু কিছু শব্দের ব্যঞ্জনায় এমন কিছু থাকে, যা অতি বড় নিরাসক্তের মন কে আকর্ষন করতে বাধ্য। শব্দব্রহ্ম বলে কথা। কাব্য নিরসনে পড়ুয়া ছাত্রটি সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকায়।
- তুই তো বেশ ভালো আবৃত্তি করিস।
আঁতেল খোকাটি নিজের আঁতেলত্ব নিয়ে অতি-অবহিত। যেকোন প্রশংসাকে কি করে কাঁধের কম্পনে গ্রহন বর্জনের মাঝামাঝি রাখতে হয়, সে জানে। কিন্তু এক অত্যাশ্চর্য বিষ্ফোরণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না, যখন শোনে পড়ুয়া বালকটি বলছে, "কবিতাটি কি তোর লেখা?"
সময়ের নিয়মে যদিবা বড় করে খুলে যাওয়া হাঁ প্রায় বুঁজে এল, তখন এল আরেক মোক্ষম বাণী, "জানিস, আমিও কবিতা লিখতাম।"
এরপর গঙ্গা দিয়ে প্রচুর জল প্রবাহিত। সমুদ্র উপচে সুনামি প্রকোপে সভ্যতার দিশাহারা চেহারা। এমত অবস্থায় কোন এক সাধারন পল্লীর বাজারে, এক আনাজ বিক্রেতা বিস্তর কাগজ চর্বন করে, একদিন ভরা সকালে, এক হাতে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে ওজন করতে করতে আশ্বাস দিলেন, "আমাদের এখানে সুনামি আসবে না।"
পারিপার্শিক মানুষেরা কৌতুহলে ফিরে তাকায় বিশেষজ্ঞের মতামত জানার জন্য। জ্ঞানী সবজি বিক্রেতা অত্যন্ত সপ্রতিভ কন্ঠে পর্যালোচনা করেন, "আসলে এই সুনামির জন্য পৃথিবীর নিচ থেকে প্রচুর গ্যাস জন্মায়। আর আমাদের চারিদিক অনেক ইন্টারনেট আছে। সমস্ত গ্যাস ইন্টারনেট শোষন করে নেয়। তাই সুনামির ভয় নেই।"
শ্রোতৃমন্ডলী যারপরনায় স্তব্ধ হয়ে থাকে, জানা বা অজানার শাশ্বত অন্বেষণে।
চতুর্দিকে কুরু-পান্ডবের সাঁজোয়া গাড়ি দাঁড়িয়ে, সারি সারি। বেচারা অর্জুনের দাঁত কপাটি লেগে যাবার জোগাড়। অস্ত্র-শস্ত্র ফেলে দিয়ে নন্ প্লেয়েইং ক্যাপ্টেনের শরণাপন্ন।
- স্যার, এরকম হবে তো ভাবিনি। আমি পারবো না স্যার।
সোজা কথায় হাত-পা পেটে মধ্যে সেঁধিয়ে যাওয়া, আর কি? কিন্তু এত কান্ড করে, যিনি একটু একটু করে যুদ্ধের গুটি পাকিয়ে এনেছেন, তার কি হবে? সভ্যতার প্রতিটি ইনিংসে অবতীর্ণ হবেন বলে যিনি কথা দিয়েছেন, অর্জুনের মতো বালখিল্যের কারণে ওয়াক ওভার দিয়ে দেবেন? এমনটা হলে টি-আর-পির দফারফা। অগত্যা শুরু হল জ্ঞান বপন আর জ্ঞান উন্মেষ। মায়ার বাঁধন কাটিয়ে, সার উপলব্ধি। তুমি কেউ নও ভাই, কেবল নিমিত্ত মাত্র। কোন ওভারে কটা নো বল, প্রথম বলে চার হবে না শূণ্য- সব আগে থেকেই নির্ধারিত। অগত্যা বেচারা জনগণ যুদ্ধে মন দেয়। পাল্টা প্রশ্ন বারন আছে।
- স্যার যদি সব আগে থেকেই সেট করা থাকে, তবে আর আমাদের টানাটানি কেন?
জানা আর অজানার এই সূক্ষ্ম সুতোর সীমানা, আবহমান কালের। জ্ঞানবৃক্ষের ফলের স্বাদ কেমন? তা জানার অত কৌতুহল না থাকলেই ল্যাঠা চুকেই যেত।
পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র অজানা। প্রশ্ন জানার পর উত্তর অজানা। সেখানে অবশ্য কিছু বিপদভঞ্জন বন্ধু উপস্থিত। জানালার পাশ অথবা শতাব্দী প্রাচীন ইউরিনালের ভিতর এত দিস্তা দিস্তা সাহায্যলিপি, সে তো সেই পরমারাধ্য "ফ্রেন্ড ইন নিড"-এর সমতুল।
এক তথাকথিত বিখ্যাত কলেজ হস্টেলের ঘরে একটি বালক অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে গাঁতিয়ে চলেছেন। কোন এক আপাত দূরুহ জ্ঞানান্বেষণে। দৃঢ়কল্প চোখে কেবল এবং কেবলমাত্র পরীক্ষারূপী পাখির চোখ। সেখানে জানার অবকাশ যত, তার বহুগুণ নম্বর পাবার অভিলাষ। অপর একটি অকালপক্ক আঁতেল বালক সহপাঠী, সেই ঘরে প্রবেশ করলে, আমাদের পড়ুয়া ছাত্রটি সামান্য বিরক্ত হয়। এই আঁতেল সম্প্রদায় যুগে যুগে অবতীর্ণ হয়। তাদের না থাকে চক্ষুলজ্জা, না থাকে পরকাল বা উত্তর-ছাত্র পর্বের ভাবনা। পরীক্ষা ও তার প্রস্তুতির পরোয়া না করে উচ্চৈঃস্বরে আবৃত্তি শুরু করে। নজরুলের 'বিদ্রোহী'। কিছু কিছু শব্দের ব্যঞ্জনায় এমন কিছু থাকে, যা অতি বড় নিরাসক্তের মন কে আকর্ষন করতে বাধ্য। শব্দব্রহ্ম বলে কথা। কাব্য নিরসনে পড়ুয়া ছাত্রটি সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকায়।
- তুই তো বেশ ভালো আবৃত্তি করিস।
আঁতেল খোকাটি নিজের আঁতেলত্ব নিয়ে অতি-অবহিত। যেকোন প্রশংসাকে কি করে কাঁধের কম্পনে গ্রহন বর্জনের মাঝামাঝি রাখতে হয়, সে জানে। কিন্তু এক অত্যাশ্চর্য বিষ্ফোরণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না, যখন শোনে পড়ুয়া বালকটি বলছে, "কবিতাটি কি তোর লেখা?"
সময়ের নিয়মে যদিবা বড় করে খুলে যাওয়া হাঁ প্রায় বুঁজে এল, তখন এল আরেক মোক্ষম বাণী, "জানিস, আমিও কবিতা লিখতাম।"
এরপর গঙ্গা দিয়ে প্রচুর জল প্রবাহিত। সমুদ্র উপচে সুনামি প্রকোপে সভ্যতার দিশাহারা চেহারা। এমত অবস্থায় কোন এক সাধারন পল্লীর বাজারে, এক আনাজ বিক্রেতা বিস্তর কাগজ চর্বন করে, একদিন ভরা সকালে, এক হাতে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে ওজন করতে করতে আশ্বাস দিলেন, "আমাদের এখানে সুনামি আসবে না।"
পারিপার্শিক মানুষেরা কৌতুহলে ফিরে তাকায় বিশেষজ্ঞের মতামত জানার জন্য। জ্ঞানী সবজি বিক্রেতা অত্যন্ত সপ্রতিভ কন্ঠে পর্যালোচনা করেন, "আসলে এই সুনামির জন্য পৃথিবীর নিচ থেকে প্রচুর গ্যাস জন্মায়। আর আমাদের চারিদিক অনেক ইন্টারনেট আছে। সমস্ত গ্যাস ইন্টারনেট শোষন করে নেয়। তাই সুনামির ভয় নেই।"
শ্রোতৃমন্ডলী যারপরনায় স্তব্ধ হয়ে থাকে, জানা বা অজানার শাশ্বত অন্বেষণে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন