শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬

বিজয়া


আজ দশমী। এবার আমাদের পাড়ার থিম ছিল লাইভ ঠাকুর। মোড়ের মিষ্টির দোকানের ময়রা হয়েছিল গণেশ, বলিউডের স্বপ্নে বিভোর ঋত্বিক হয়েছিল কার্তিক, পাড়ার হার্টথ্রব চিনির বোন মিনি হয়েছিল সরস্বতী। চিনি রাজি হল না, তাই অপর্ণাদি লক্ষ্মী। জিম করা গুলেদা অসুর আর পাড়ার রাঙামাসি দুর্গা। সবাই কে হেব্বি মানিয়েছিল। ঋত্বিকটা মিনির দিকে কয়েকদিন যাবৎ একটু কার্নিক খাচ্ছিল। সুযোগটা পুরো কাজে লাগালো। মহালয়ার দিন থেকে ওদের রিহার্সাল। বেদান্ততীর্থ থেকে নিয়মিত যোগ আর ডায়েট চার্ট করে দিয়েছিল। দেবত্ব অর্জন যে সে কথা! দুবেলা সবাই "মা-মা" করে পুজো করল, অঞ্জলি দিল, ধুনুচি নাচল। শুধু বিসর্জন দেবার সময় দর্পণেই খেল খতমঋত্বিক দেবীপক্ষের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মিনির পাশেকতটা চিঁড়ে ভিজেছে, তা সময় বলবে। ময়রার ভুঁড়ো পেট নিয়ে চলতে ফিরতে অসুবিধে। সেও কটিয়ে দিল কটা দিন। রাঙামাসির বড় বড় চোখ। এমনিতেই ভীষণ মা মা। দশহাতে বড় সুন্দর লাগছিল। দর্শকরা সবাই এমন করছিল, সত্যজিতের দেবী সিনামা মনে পড়ে যাচ্ছিল। গুলেদা স্পোর্টসম্যান। মাসল দেখাতে কোন আপত্তি নেই। চিনি না থাকায় ঋত্বিকের লাভগার্জেনগিরি ফলাবার কেউ ছিলনা মিনির সাথে চমৎকার সেটিং হল। কত ছবি যে একসাথে উঠল তার আর লেখাজোখা নেই।

কর্মকর্তারা খুশি। বিজ্ঞাপনে ভালো রোজগার হয়েছে। পাড়াতে খোলতাই মেজাজ। মিষ্টিমুখ আর কোলাকুলি চলছে। ক্লাব ঘরের এক কোনাতে ঋত্বিক আর মিনি প্রসাদের দৈ-চিঁড়ে খাচ্ছিল। ঋত্বিক একটু গলা নামিয়ে বলল, "কাল বিকেলে তো আর শো নেই। তোমার সাথে কি করে দেখা হবে?"

- কেন বলতো? কিছু জরুরি?

- তা একটু জরুরি তো বটেই।

- কিছু বলবে? সে তো এখানেই বলতে পারো?

- না এখানে সবার মাঝখানে একটু চাপ আছে।

- তোমাকেও আমার একটা জিনিস দেবার আছে।

- কি?

ঋত্বিক আগ্রহে ফেটে পরে। দশদিনের পাশাপাশি থাকা, মিনি নিশ্চই বুঝেছে

- দিচ্ছি বাবা দিচ্ছি। আমি নিয়েই এসেছিলাম। তেমন কিছু নয়, আমাদের এই শো-র একটা স্মারক। কার্তিক, সরস্বতীর ভাই না দাদা? যাই হোক, এখন থেকে আমি তোমার বোন হলাম কেমন?"। এই বলে ঋত্বিকের ডান হাতে রেশমের দড়ি বেঁধে দেয়। ঋত্বিকের মুখটা চুপসানো বেলুনের মতো নিভে যাচ্ছিল  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ব্লগ এবং বই পাওয়ার ঠিকানাঃ https://souravstory.com

 এখন থেকে ব্লগ সহ অন্যান্য সব খবর এবং বই পাওয়ার ঠিকানাঃ https://souravstory.com