একটা বড় ঠোঁটের সারস। ছেয়ে রঙের শরীর। গলার কাছটিতে সাদা। লম্বা লম্বা পা ফেলে চলেছে। ছোট্ট নদীর আঁকে বাঁকে আসকলি আর উলু ঘাসের ঝোপ। টলটল জল নদীর নিচ পর্যন্ত দেখা যায়। বিকেলের এই সময়টা বেশ মনোরম। গনগনে রোদের তাপ একটু কমেছে। দক্ষিণের বাতাসে একটু যেন আরামের ঘ্রাণ।
সাতটা মহিষ নিয়ে জলে নামে বুড়ো। পাকানো দড়ির মতো চেহারা। বিচুলি দিয়ে ঘষে ঘষে প্রতিটি মহিষের গা পরিস্কার করতে থাকে। অতগুলো মহিষকে দেখে সারসটা থমকায়। একটু সরে জায়গা দেয়। পরম যত্নে বুড়ো মহিষদের স্নান করায়। শেষ নিজে স্নান সারে।
এরপর হেট হেট করতে করতে পোষ্য নিয়ে বাড়ির পথে। পাকা রাস্তা ছেড়ে মাটিতে। ঝরা পাতায় পুরো পথ ঢাকা। বাঁশ ঝাড় পেরতে, ওপাশ থেকে ডাক আসে, "কই ঠাকুর জামাই, ঝুড়িভাজা নিয়ে গেলে না?" ডাক শুনে মহিষদের ছেড়ে দেয়। বাকি পথটা ওরা একাই যেতে পারবে। পথ ছেড়ে বুড়ো পানুদের বাড়ির দিকে ঘোরে। নিকোনো উঠোন। একটা বড় আমগাছ তলায় রান্নাঘর। ভিতর থেকে ছাঁকা তেলের ভাজা গন্ধ ভেসে আসছে। পানুর মা একটা পাটি এগিয়ে দেয়। বুড়ো লম্বা পা মুড়ে বসে। একটা বিড়ি ধরায়। একটা মস্ত গামলায় বেসনের তাল ঠাসে পানু। পানুর মা আর বৌ সেই বেসন ঝাঁঝরি করা কৌটো দিয়ে কড়াইএর উপর ঘোরায়। গোল গোল ঝুড়ি ভাজা। তারপর তেল ঝারিয়ে বিটনুন দিয়ে প্যাকেটে মোড়া হচ্ছে। পানুর মা এক বাটিতে একটু মুড়ি, গরম ঝুড়িভাজা আর কাঁচালঙ্কা এনে বুড়োর সামনে রাখে। তারপর আমগাছের দিকে তাকিয়ে ডাকতে থাকে- "বুলবুলি ও বুলবুলি।" তীক্ষ্ণ শিসে উত্তর দিতে দিতে নেমে আসে, একটা সবুজ রঙের টিয়া। পাখিটা পানুদের পোষা, নাম বুলবুলি। তবে খাঁচায় রাখতে হয় না। ও গাছেই থাকে, খাবার সময় ডাকলে, নেমে আসে ঠিক। বুড়ো বুলবুলিকে একটা ঝুড়িভাজা দেয়। লাল ব্যাঁকা শক্ত ঠোঁটে খাবার কামড়ে ধরে। তারপর গাছ বেয়ে তরতর করে রান্নাঘরের চালে উঠে বসে।
বেসন মাখতে মাখতে পানু বলে, "পিসে, খবর কেমন বুঝছ?"
- খবর আর কি?
- পঞ্চায়েত অফিস থেকে এসেছিল?
- হ্যাঁ তারা তো বাড়ি বাড়ি লিস্টি মেলাচ্ছে।
- সে তো দু মাস ধরে হচ্ছে। নতুন খবর কি?
- নতুন আবার কি?
- কেন তুমি ভোট দিবা না?
- হ, ভোট তো দিবোই। টিয়ারে বুলবুলি নাম দিবি। আর সে বেটাও সাত বোগদার এক বোগদা। ডাকলে সাড়াও দেয়।
- তুমি কি ভাব? সে কি ডাক শুনে আসে? আসে ঝুড়ি ভাজার লোভে।
- ভোটবাবুরাও আসে। ও তো অবলা পাখি!
সর্বশিক্ষা প্রজেক্টে পানুর নাম শিক্ষক হিসেবে লেখানো আছে। ঘরে গাদা বই ডাঁই করা। খাতা ভরা ছাত্রদের তালিকা। মাঝে মাঝে উপস্থিতির চিহ্ন বসিয়ে নেয়। বই পত্তর যেমন কি তেমন ধরা থাকে। একটা মোটা ডিক্সনারি আর একটা গ্লোব আছে। পানুর ছোট ছেলেটা গ্লোবটা নিয়ে খেলা করে। আর মোটা বইটা সেলাই-এর সময় কাঁথা চাপা দেবার কাজে লাগে। চাষের কাজ ছাড়া, ঝুড়ি ভেজে তেমন যুৎসই হয় না। কয়েক বছর হল, অধীর সর্বশিক্ষার কাজটা পাইয়ে দেয়। তার বদলে পতাকা নিয়ে মিছিলে হাঁটা বা কলকাতায় যাওয়া। কিন্তু আজকাল অধীর নিজেই যেন অন্য সুর গাইছে। পানু বোঝেনা। বুড়ো কিছু বোঝে কি না, তা বুড়োই জানে।
মুড়ি শেষ করে বুড়ো ওঠে। পানু ছয়টা, ডজনের প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। বুড়ো মহিষের দুধ দিতে যায়, সাথে আজকাল ঝুড়িভাজাও রাখে। চায়ের দোকানগুলো নেয়। অধীর বলেছে, টাউনে কয়েকটা ক্যান্টিন ধরিয়ে দেবে। তবে বুড়ো খুব জানে, এখন কিছু হবার নয়। কেমন একটু ভয় ভয় করে। ভোটের পর কি আগের হিসেব মিলবে? ঘরে ফেরার পথে সারসটার দেখা পায় আবার। নদীর অন্য পাড় দিয়ে চলেছে, সতর্ক পায়ে।
সাতটা মহিষ নিয়ে জলে নামে বুড়ো। পাকানো দড়ির মতো চেহারা। বিচুলি দিয়ে ঘষে ঘষে প্রতিটি মহিষের গা পরিস্কার করতে থাকে। অতগুলো মহিষকে দেখে সারসটা থমকায়। একটু সরে জায়গা দেয়। পরম যত্নে বুড়ো মহিষদের স্নান করায়। শেষ নিজে স্নান সারে।
এরপর হেট হেট করতে করতে পোষ্য নিয়ে বাড়ির পথে। পাকা রাস্তা ছেড়ে মাটিতে। ঝরা পাতায় পুরো পথ ঢাকা। বাঁশ ঝাড় পেরতে, ওপাশ থেকে ডাক আসে, "কই ঠাকুর জামাই, ঝুড়িভাজা নিয়ে গেলে না?" ডাক শুনে মহিষদের ছেড়ে দেয়। বাকি পথটা ওরা একাই যেতে পারবে। পথ ছেড়ে বুড়ো পানুদের বাড়ির দিকে ঘোরে। নিকোনো উঠোন। একটা বড় আমগাছ তলায় রান্নাঘর। ভিতর থেকে ছাঁকা তেলের ভাজা গন্ধ ভেসে আসছে। পানুর মা একটা পাটি এগিয়ে দেয়। বুড়ো লম্বা পা মুড়ে বসে। একটা বিড়ি ধরায়। একটা মস্ত গামলায় বেসনের তাল ঠাসে পানু। পানুর মা আর বৌ সেই বেসন ঝাঁঝরি করা কৌটো দিয়ে কড়াইএর উপর ঘোরায়। গোল গোল ঝুড়ি ভাজা। তারপর তেল ঝারিয়ে বিটনুন দিয়ে প্যাকেটে মোড়া হচ্ছে। পানুর মা এক বাটিতে একটু মুড়ি, গরম ঝুড়িভাজা আর কাঁচালঙ্কা এনে বুড়োর সামনে রাখে। তারপর আমগাছের দিকে তাকিয়ে ডাকতে থাকে- "বুলবুলি ও বুলবুলি।" তীক্ষ্ণ শিসে উত্তর দিতে দিতে নেমে আসে, একটা সবুজ রঙের টিয়া। পাখিটা পানুদের পোষা, নাম বুলবুলি। তবে খাঁচায় রাখতে হয় না। ও গাছেই থাকে, খাবার সময় ডাকলে, নেমে আসে ঠিক। বুড়ো বুলবুলিকে একটা ঝুড়িভাজা দেয়। লাল ব্যাঁকা শক্ত ঠোঁটে খাবার কামড়ে ধরে। তারপর গাছ বেয়ে তরতর করে রান্নাঘরের চালে উঠে বসে।
বেসন মাখতে মাখতে পানু বলে, "পিসে, খবর কেমন বুঝছ?"
- খবর আর কি?
- পঞ্চায়েত অফিস থেকে এসেছিল?
- হ্যাঁ তারা তো বাড়ি বাড়ি লিস্টি মেলাচ্ছে।
- সে তো দু মাস ধরে হচ্ছে। নতুন খবর কি?
- নতুন আবার কি?
- কেন তুমি ভোট দিবা না?
- হ, ভোট তো দিবোই। টিয়ারে বুলবুলি নাম দিবি। আর সে বেটাও সাত বোগদার এক বোগদা। ডাকলে সাড়াও দেয়।
- তুমি কি ভাব? সে কি ডাক শুনে আসে? আসে ঝুড়ি ভাজার লোভে।
- ভোটবাবুরাও আসে। ও তো অবলা পাখি!
সর্বশিক্ষা প্রজেক্টে পানুর নাম শিক্ষক হিসেবে লেখানো আছে। ঘরে গাদা বই ডাঁই করা। খাতা ভরা ছাত্রদের তালিকা। মাঝে মাঝে উপস্থিতির চিহ্ন বসিয়ে নেয়। বই পত্তর যেমন কি তেমন ধরা থাকে। একটা মোটা ডিক্সনারি আর একটা গ্লোব আছে। পানুর ছোট ছেলেটা গ্লোবটা নিয়ে খেলা করে। আর মোটা বইটা সেলাই-এর সময় কাঁথা চাপা দেবার কাজে লাগে। চাষের কাজ ছাড়া, ঝুড়ি ভেজে তেমন যুৎসই হয় না। কয়েক বছর হল, অধীর সর্বশিক্ষার কাজটা পাইয়ে দেয়। তার বদলে পতাকা নিয়ে মিছিলে হাঁটা বা কলকাতায় যাওয়া। কিন্তু আজকাল অধীর নিজেই যেন অন্য সুর গাইছে। পানু বোঝেনা। বুড়ো কিছু বোঝে কি না, তা বুড়োই জানে।
মুড়ি শেষ করে বুড়ো ওঠে। পানু ছয়টা, ডজনের প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। বুড়ো মহিষের দুধ দিতে যায়, সাথে আজকাল ঝুড়িভাজাও রাখে। চায়ের দোকানগুলো নেয়। অধীর বলেছে, টাউনে কয়েকটা ক্যান্টিন ধরিয়ে দেবে। তবে বুড়ো খুব জানে, এখন কিছু হবার নয়। কেমন একটু ভয় ভয় করে। ভোটের পর কি আগের হিসেব মিলবে? ঘরে ফেরার পথে সারসটার দেখা পায় আবার। নদীর অন্য পাড় দিয়ে চলেছে, সতর্ক পায়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন