সাধ করে বাপ মা নাম দিয়েছিল দিবাকর। গ্রহের ফেরে এমন এক চাকরি জুটল, যেখানে শুধু নাইট ডিউটি। দিনের আলোর সাথে দেখা আর হয়না। এক বিদেশি কোম্পানির ব্যাক-অফিস সাপোর্ট। ওখানকার মানুষজন, তাঁদের সময়ে যখন দরকার, দিবাকর গোলার্ধের এদিকে বসে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেয়। তখন ওর নাম শুধু ডিবস্। সাহেবদের অমন জবাকুসুমের মতো নামে জিভ জড়িয়ে যেতে পারে। ছেলেটির আঠাশ বছর বয়স। এর মধ্যে ক্রমাগত রাতের তেল পুড়িয়ে আটত্রিশ বানিয়ে ফেলেছে। এই ডিবস্ যখন আপিসে আসে তখন চারিদিক শুনশান। রাস্তায় কিছু কুকুর মাতাল চোর বা পুলিশের চলাচল। গাড়ি পেতেও সমস্যা হয়। শুরুতে আপিস থেকে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কতদিন সেটা চড়েই আসা যাওয়া। এই গাড়িগুলো সাধারনতঃ রাতচরা হয়। ফাঁকা রাস্তায় হাওয়ার সাথে কথা কইতে কইতে আসে। গাড়ি এবং চালকের এক অপূর্ব সমণ্বয়। দিবাকরদের গাড়ির চালক নৌসাদ। অত্যন্ত পাকা হাত। রাতের অন্ধকার চিরে, কালো পিচের ওপর খেলার ছলে চাকাগুলিকে যেন দৌড় করায়। ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরে নিশাচর গাড়িতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জেরে, এখন একজন করে নিরাপত্তা রক্ষী এই গাড়ি গুলোতে থাকেন।
শুধু একা ওর জন্য কোম্পানিও বা কতদিন গাড়ি দেবে। তাই ঠিক হল, আগের শিফ্টের যারা ওর বাড়ির ওদিকে থাকেন, তাদের যখন নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ফিরবে, ডিবস্ সেই সময় গাড়ি চড়তে পারে। এতে করে দিবাকরের জীবনে সেই মহার্ঘ্য ক্ষণ এল, প্রেম। গাড়িতে আগের শিফ্টের দলবীরের সাথে আলাপ হল। দলবীর পাঞ্জাবের মেয়ে, অত্যন্ত স্মার্ট, আধুনিক, চোখে মুখে কথা বলে। দুই বছর হল দিবাকর এই আপিসে কাজ করছে, দলবীরের অস্তিত্ব সম্বন্ধেই অজ্ঞাত ছিল। রাতের আপিসে দুচার জন পুরুষ কর্মী ছিল। তাদের অধিকাংশ হাতের কাজ শেষ করে ঘুমোত। শুধু দিবাকরের ঘুম ছিলনা। নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠাই তাকে জাগিয়ে রাখত। এমন নির্বিরোধ শান্তশিষ্ট ছেলেটি যে দলবীরের ঝড়ে ঝরাপাতার মতো উড়ে যাবে, তা আর অসম্ভব কি?
রাতের আন্ধকারে, দলবীর দিনের মতো আলো নিয়ে এল। তবে গাড়িতে রক্ষী থাকায় তেমন আলাপচারিতা হয়না। আপিসের গাড়ির অপেক্ষা না করে, আগেই দিবাকর আপিস চলে আসতে লাগল, যাতে দলবীর কে আরকেটু বেশি পায়। এখন ফেরার পথে আপিসের গাড়িতে দলবীর একাই ফেরে। মাস ছয়েকের এক স্বপ্নের মধ্যে ঘুরপাক খায় দিবাকর। মাথায় পাগড়ি বেঁধে শিখ হওয়া যায় কিনা তার খোঁজখবর নিতে আরম্ভ করে।
এমন একদিন রাতে নৌসাদের সাথে দিবাকর আর দলবীর চলেছে। সামনের সিটে নিরাপত্তা রক্ষী। আর যে সব সহযাত্রীরা ছিল, তারা সব নেমে গেছে। সামনে দলবীরের বাড়ি। দলবীর কে নামিয়ে গাড়ি দিবাকরকে নিয়ে আপিস ফিরবে। এমন সময় রাস্তা আটকায় পুলিশের জিপ। দিবাকর লক্ষ্য করে আসেপাশে ওদের মতো আরো অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে। সব চালকরা কাগজ হাতে সার্জেন্টের সামনে লাইন দিয়ে। নৌসাদ বেজার মুখে অন্যদের মতো লাইন দিল। খানিক বাদে এক পুলিশ এসে দিবাকরদের জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবে। শুনে, ওদের কে একটা পুলিশের জিপে নিয়ে বসায়। বলে, “আপনাদের গাড়ির কাগজ ঠিক নেই। ওটা আমরা সিজ করছি। তবে আপনাদের আমরা পৌঁছৈ দেব”। পরে জেনেছিল প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার ফাইন করেছে পুলিশ। ভাড়া খাটানোর অনুমতিই নাকি ওদের ছিলনা।
আপিসের এই গাড়িগুলো একটি তৃতীয় প্রতিষ্ঠানের। তারা চালক সমেত গাড়ি ভাড়া খাটায়। সেই রাতের পর নৌসাদ অনুপস্থিত। গাড়ি কোম্পানির মালিক নিজেই অন্য একটা গাড়ি চালিয়ে আসেন। অমন ছয়ফুটের জোয়ানকে দেখে, আপিসের নিরাপত্তা রক্ষী একটু ভয় পেয়ে যায়। আসলে গাড়ি কোম্পানির প্রকৃত মালিক যে কে, তিনি কখনও সামনে আসেননি। তারপর জানা গেল। এই ভদ্রলোকটি হল বেদি কার সার্ভিসের মালিক শ্রী হরপ্রীত বেদী। অতয়েব তাঁর প্রতি সম্ভ্রম বেড়ে গেল। সবাই প্রশংসা করল, “দেখ কেমন ডিউটি করছে”, “মালিক বলে একটুও অহঙ্কার নেই”, প্রভৃতি। ক্রমে দেখা গেল আগের চালক নৌসাদ আর রাতের ডিউটি ধরতে পারছে না। ওদিকে দিনের ডিউটি করেও ওদের বড্ড অসুবিধা। এত জ্যাম আর সিগন্যাল খেতে অভ্যস্থ নয়। নৌসাদের প্রায় পাগল পাগল অবস্থা। সবাই কে বলেই ফেলে, দিনের বেলায় ওর গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। বড্ড ঘুম ঘুম পায়। এসব শুনে অনেকে নৌসাদের গাড়িতে দিনের বেলাতে উঠতে ভয় পেতে আরম্ভ করে। তবে এসব সমস্যা আর বেশিদিন রইল না। নৌসাদ আবার রাতের ডিউটিতে বহাল হল। তার কারন এখন আর হরপ্রীত আসছেন না। কদিনের মধ্যে দলবীরও কাজ ছেড়ে দিল। মাসখানেক পর পুরোন সহকর্মীদের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে আসে দলবীর। গাড়ি কোম্পানির মালিক হরপ্রীতের গৃহিনী হতে চলেছে। অনেকেই উচ্ছাস প্রকাশ করে অভিনন্দন জানায়। বলা বাহল্য, সে নিমন্ত্রণের খবর রাতের শিফ্টেও পৌঁছে যায়।
দিবাকরের হয়তো আর শিখ হওয়া হল না। তবে ইদানিং লম্বা দাড়িতে, দিবাকরকে অন্য রকম লাগে।
শুধু একা ওর জন্য কোম্পানিও বা কতদিন গাড়ি দেবে। তাই ঠিক হল, আগের শিফ্টের যারা ওর বাড়ির ওদিকে থাকেন, তাদের যখন নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ফিরবে, ডিবস্ সেই সময় গাড়ি চড়তে পারে। এতে করে দিবাকরের জীবনে সেই মহার্ঘ্য ক্ষণ এল, প্রেম। গাড়িতে আগের শিফ্টের দলবীরের সাথে আলাপ হল। দলবীর পাঞ্জাবের মেয়ে, অত্যন্ত স্মার্ট, আধুনিক, চোখে মুখে কথা বলে। দুই বছর হল দিবাকর এই আপিসে কাজ করছে, দলবীরের অস্তিত্ব সম্বন্ধেই অজ্ঞাত ছিল। রাতের আপিসে দুচার জন পুরুষ কর্মী ছিল। তাদের অধিকাংশ হাতের কাজ শেষ করে ঘুমোত। শুধু দিবাকরের ঘুম ছিলনা। নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠাই তাকে জাগিয়ে রাখত। এমন নির্বিরোধ শান্তশিষ্ট ছেলেটি যে দলবীরের ঝড়ে ঝরাপাতার মতো উড়ে যাবে, তা আর অসম্ভব কি?
রাতের আন্ধকারে, দলবীর দিনের মতো আলো নিয়ে এল। তবে গাড়িতে রক্ষী থাকায় তেমন আলাপচারিতা হয়না। আপিসের গাড়ির অপেক্ষা না করে, আগেই দিবাকর আপিস চলে আসতে লাগল, যাতে দলবীর কে আরকেটু বেশি পায়। এখন ফেরার পথে আপিসের গাড়িতে দলবীর একাই ফেরে। মাস ছয়েকের এক স্বপ্নের মধ্যে ঘুরপাক খায় দিবাকর। মাথায় পাগড়ি বেঁধে শিখ হওয়া যায় কিনা তার খোঁজখবর নিতে আরম্ভ করে।
এমন একদিন রাতে নৌসাদের সাথে দিবাকর আর দলবীর চলেছে। সামনের সিটে নিরাপত্তা রক্ষী। আর যে সব সহযাত্রীরা ছিল, তারা সব নেমে গেছে। সামনে দলবীরের বাড়ি। দলবীর কে নামিয়ে গাড়ি দিবাকরকে নিয়ে আপিস ফিরবে। এমন সময় রাস্তা আটকায় পুলিশের জিপ। দিবাকর লক্ষ্য করে আসেপাশে ওদের মতো আরো অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে। সব চালকরা কাগজ হাতে সার্জেন্টের সামনে লাইন দিয়ে। নৌসাদ বেজার মুখে অন্যদের মতো লাইন দিল। খানিক বাদে এক পুলিশ এসে দিবাকরদের জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবে। শুনে, ওদের কে একটা পুলিশের জিপে নিয়ে বসায়। বলে, “আপনাদের গাড়ির কাগজ ঠিক নেই। ওটা আমরা সিজ করছি। তবে আপনাদের আমরা পৌঁছৈ দেব”। পরে জেনেছিল প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার ফাইন করেছে পুলিশ। ভাড়া খাটানোর অনুমতিই নাকি ওদের ছিলনা।
আপিসের এই গাড়িগুলো একটি তৃতীয় প্রতিষ্ঠানের। তারা চালক সমেত গাড়ি ভাড়া খাটায়। সেই রাতের পর নৌসাদ অনুপস্থিত। গাড়ি কোম্পানির মালিক নিজেই অন্য একটা গাড়ি চালিয়ে আসেন। অমন ছয়ফুটের জোয়ানকে দেখে, আপিসের নিরাপত্তা রক্ষী একটু ভয় পেয়ে যায়। আসলে গাড়ি কোম্পানির প্রকৃত মালিক যে কে, তিনি কখনও সামনে আসেননি। তারপর জানা গেল। এই ভদ্রলোকটি হল বেদি কার সার্ভিসের মালিক শ্রী হরপ্রীত বেদী। অতয়েব তাঁর প্রতি সম্ভ্রম বেড়ে গেল। সবাই প্রশংসা করল, “দেখ কেমন ডিউটি করছে”, “মালিক বলে একটুও অহঙ্কার নেই”, প্রভৃতি। ক্রমে দেখা গেল আগের চালক নৌসাদ আর রাতের ডিউটি ধরতে পারছে না। ওদিকে দিনের ডিউটি করেও ওদের বড্ড অসুবিধা। এত জ্যাম আর সিগন্যাল খেতে অভ্যস্থ নয়। নৌসাদের প্রায় পাগল পাগল অবস্থা। সবাই কে বলেই ফেলে, দিনের বেলায় ওর গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। বড্ড ঘুম ঘুম পায়। এসব শুনে অনেকে নৌসাদের গাড়িতে দিনের বেলাতে উঠতে ভয় পেতে আরম্ভ করে। তবে এসব সমস্যা আর বেশিদিন রইল না। নৌসাদ আবার রাতের ডিউটিতে বহাল হল। তার কারন এখন আর হরপ্রীত আসছেন না। কদিনের মধ্যে দলবীরও কাজ ছেড়ে দিল। মাসখানেক পর পুরোন সহকর্মীদের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে আসে দলবীর। গাড়ি কোম্পানির মালিক হরপ্রীতের গৃহিনী হতে চলেছে। অনেকেই উচ্ছাস প্রকাশ করে অভিনন্দন জানায়। বলা বাহল্য, সে নিমন্ত্রণের খবর রাতের শিফ্টেও পৌঁছে যায়।
দিবাকরের হয়তো আর শিখ হওয়া হল না। তবে ইদানিং লম্বা দাড়িতে, দিবাকরকে অন্য রকম লাগে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন