সময় পাল্টেছে খুব দ্রুততায়। আজ গ্রাম আর শহরের সেই বিভাজন আর নেই। টেলিভিশনের দৌলতে প্রত্যেকের অন্দরমহলে পৌঁছে গেছে অত্যাধুনিক সংস্কৃতি বা অপসংস্কৃতির স্বাদ রূপ গন্ধ অতি সহজেই। উপগ্রহ চ্যানেলের উপস্থিতি চোখে পড়ে প্রতিটি বাড়িতেই। এমন কি যাঁরা দিন মজুরি করেন, তাঁদের ঝুপড়িতেও। সব যেন এক ছাঁচে ঢালা। সেই সময় যে মৌলিক বৈশিষ্ট ধরা পড়ত, তা সময়ের ক্ষমতা বলে বড়বেশি এক রঙা। আগে প্রতিটি নগর বা গ্রামের একটা নিজস্ব চরিত্র ছিল। সেই জায়গায় পৌঁছলেই, তা দৃ্শ্যত প্রতীয়মান হত। এখন যে ঘাটেই নোঙর ফেলি না কেন, পরিচিত বহুজাতিকের বিশালাকায় বিজ্ঞাপনের একই মুখ চোখে পড়ে। সে আমার শহর তোমার শহর, বা তোমার গ্রাম আমার গ্রাম সর্বত্র।
সেদিন আমার এক নিমন্ত্রণ ছিল। আমাদের বাড়ির রান্নামাসির নাতির অন্নপ্রাশন। ওদের বাড়ি, শহরাঞ্চলের পরিধি ছাড়িয়ে শহরতলির প্রান্তে। রান্নামাসির ছেলে গাড়ি চালায়, আর স্বামী রিক্সা। ছোট্ট বাড়ি, মাথার ওপর টিনের চাল। পরিপাটি, গুছোনো সংসার। ঘরে টেলিভিশন চলছে। আপ্যায়নে ফাঁক নেই। নিমন্ত্রিতরা বেশিরভাগ শ্রমজীবি মানুষ। লক্ষ্য করলাম, বেশিরভাগ মানুষের পোশাক, অত্যন্ত অধুনিক ছাঁচের। যেমনটি আমরা এখনকার সিনামা, সিরিয়াল বা বিজ্ঞাপনে দেখতে পাই। একটু ফারাক এই যে, পোশাকগুলি হয়তো নামি ব্র্যান্ডের নয়। তবে তার নক্সা এবং সৌন্দর্য্য কোন অংশে কম নয়। মহিলাদের চোখে মুখে প্রসাধন চর্চার প্রভাব সুস্পষ্ট। আমাদের রান্নামাসি, যিনি সম্পর্কে ঠাকুমা হয়েছেন, তিনি নিয়মিত দোকানে গিয়ে রূপচর্চা করেন। আর খুব লাজুকমুখে কবুল করলেন যে, আজকের জন্য তিনি বিশেষ পরিষেবা নিয়েছেন। সে সব মালিশ, চুলের নক্সা বা স্পা সম্পর্কে আমি বা আমার গৃহিনীরও সম্যক ধারনা নেই। পাত পেড়ে খাওয়া, উপহার দেওয়া তো রয়েছেই, সাথে ডিজে মিউজিক সহকারে ডান্স ফ্লোরের ব্যবস্থা। সেখানে নাতি, নাতনি, ছেলে, মেয়ে, বৌমা, আত্মীয়, নিমন্ত্রিত সবার সাথেই আমাদের রান্নামাসি ও তাঁর পরিবার অত্যন্ত সাবলীল। আমার নিজেকে যেন পিছিয়ে পড়া মানুষ বলে মনে হল, যখন অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে নাচের আঙিনায় যাবার অনুরোধ ফেরাতে হয়। কি করব ওই বিদ্যেটা তো তেমন রপ্ত হয়নি।
গৃহকর্ত্রী বেশ কড়া অনুশাসনে রেখেছে বোঝা গেল। এতসব আনন্দ উপাদানে উৎশৃঙ্খলা নজরে আসেনা। মদ্যপানের ব্যবস্থা অন্ততঃ খোলা চোখে পড়েনি। সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ্য সন্ধ্যা কাটিয়ে এলাম। মাথার মধ্যে কিছু এলোমেলো চিন্তার বাতাস ঘোরাফেরা করে। এমনটা কি হবার কথা ছিল? না কি আমি বেশি ভাবছি? আমার তথাকথিত উন্নাসিক 'সভ্যতার' নিরিখে এই মানুষগুলো কে প্রত্নউপাদানের মতো, সময়ের ফসিল হিসেবে দেখতে না পেয়ে, কি বিচলিত হচ্ছি? বিদায় নেবার সময়, আমাদের নাচের আঙিনাতে পায়নি বলে বেশ আক্ষেপ শোনা গেল। আমার এ দূর্বলতা কে আমি কি প্রচ্ছন্ন গর্ব মনে করেছিলাম? যা আজ ধ্বসে যাচ্ছে বলে কষ্ট হল?
সেদিন আমার এক নিমন্ত্রণ ছিল। আমাদের বাড়ির রান্নামাসির নাতির অন্নপ্রাশন। ওদের বাড়ি, শহরাঞ্চলের পরিধি ছাড়িয়ে শহরতলির প্রান্তে। রান্নামাসির ছেলে গাড়ি চালায়, আর স্বামী রিক্সা। ছোট্ট বাড়ি, মাথার ওপর টিনের চাল। পরিপাটি, গুছোনো সংসার। ঘরে টেলিভিশন চলছে। আপ্যায়নে ফাঁক নেই। নিমন্ত্রিতরা বেশিরভাগ শ্রমজীবি মানুষ। লক্ষ্য করলাম, বেশিরভাগ মানুষের পোশাক, অত্যন্ত অধুনিক ছাঁচের। যেমনটি আমরা এখনকার সিনামা, সিরিয়াল বা বিজ্ঞাপনে দেখতে পাই। একটু ফারাক এই যে, পোশাকগুলি হয়তো নামি ব্র্যান্ডের নয়। তবে তার নক্সা এবং সৌন্দর্য্য কোন অংশে কম নয়। মহিলাদের চোখে মুখে প্রসাধন চর্চার প্রভাব সুস্পষ্ট। আমাদের রান্নামাসি, যিনি সম্পর্কে ঠাকুমা হয়েছেন, তিনি নিয়মিত দোকানে গিয়ে রূপচর্চা করেন। আর খুব লাজুকমুখে কবুল করলেন যে, আজকের জন্য তিনি বিশেষ পরিষেবা নিয়েছেন। সে সব মালিশ, চুলের নক্সা বা স্পা সম্পর্কে আমি বা আমার গৃহিনীরও সম্যক ধারনা নেই। পাত পেড়ে খাওয়া, উপহার দেওয়া তো রয়েছেই, সাথে ডিজে মিউজিক সহকারে ডান্স ফ্লোরের ব্যবস্থা। সেখানে নাতি, নাতনি, ছেলে, মেয়ে, বৌমা, আত্মীয়, নিমন্ত্রিত সবার সাথেই আমাদের রান্নামাসি ও তাঁর পরিবার অত্যন্ত সাবলীল। আমার নিজেকে যেন পিছিয়ে পড়া মানুষ বলে মনে হল, যখন অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে নাচের আঙিনায় যাবার অনুরোধ ফেরাতে হয়। কি করব ওই বিদ্যেটা তো তেমন রপ্ত হয়নি।
গৃহকর্ত্রী বেশ কড়া অনুশাসনে রেখেছে বোঝা গেল। এতসব আনন্দ উপাদানে উৎশৃঙ্খলা নজরে আসেনা। মদ্যপানের ব্যবস্থা অন্ততঃ খোলা চোখে পড়েনি। সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ্য সন্ধ্যা কাটিয়ে এলাম। মাথার মধ্যে কিছু এলোমেলো চিন্তার বাতাস ঘোরাফেরা করে। এমনটা কি হবার কথা ছিল? না কি আমি বেশি ভাবছি? আমার তথাকথিত উন্নাসিক 'সভ্যতার' নিরিখে এই মানুষগুলো কে প্রত্নউপাদানের মতো, সময়ের ফসিল হিসেবে দেখতে না পেয়ে, কি বিচলিত হচ্ছি? বিদায় নেবার সময়, আমাদের নাচের আঙিনাতে পায়নি বলে বেশ আক্ষেপ শোনা গেল। আমার এ দূর্বলতা কে আমি কি প্রচ্ছন্ন গর্ব মনে করেছিলাম? যা আজ ধ্বসে যাচ্ছে বলে কষ্ট হল?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন