মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮

কাগজের ফুল

কাগজ ফুলে ওই
রঙ ধরছে সই
মনের কথা এখন আমি কারে গিয়ে কই?

সবুজ মাঠের ওপরে
মেঘ নেমেছে দুপুরে
আঁধার এলো মনের ঘরে আলো জ্বালে কে?

পুকুর ঘাটে যাবো না
তরাস বুকের বাজনা
ধুকপুকিয়ে পাখি বুঝি ডানা মেলে ওই

রাতের ঘুমে বলে সে
স্বপন যেন না আসে
চোখের পাতা খোলা খাতা নাম সে লিখেছে

ভেবে ভেবেই আজ
এলোমেলো কাজ
আকাশকুসুম পাড়তে গিয়ে কেড়ে নিল মই

রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৮

ছুঁয়ে ছুঁয়ে

ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
চেনা আচেনায়
কাছে এসে যদি কেউ বসে
বিকেলের আলো
আঁচলে জড়ালো
স্বপ্নেরা ডানা মেলে ভাসে

আলতো আঙুলে
খোঁপা খসা চুলে
দেখেছি তোমায় আনমনে
মনের এই বাসা
যাওয়া আর আসা
পথটুকু নিয়েছি যে চিনে

সেই পথে চলে
যেন আবডালে
কোন কথা মিশে থাকে শ্বাসে
খোয়াব খোয়ানো
রাংতা মোড়ানো
স্বপ্নেরা ডানা মেলে ভাসে

সোমবার, ২১ মে, ২০১৮

দ্বিতীয় দিন

যে দুটি বইএর দরজা খুলে কবিতার সাথে দেখা হল, তারা হলেন 'সঞ্চিতা' এবং 'সঞ্চয়িতা'। চেতনে অবচেতনে রক্তে মিশে গেল 'বীরপুরুষ', 'বিদ্রোহী', 'লুকোচুরি', 'কাঠবেড়ালি' সহ আরও অসংখ্য শব্দ ঝংকার। মনের অলিন্দে আজও তাদের অনায়াস চলাফেরা। তৈরী করে ভাষার প্রতি ভালোবাসা, যোগান দেয় স্বপ্ন দেখার উপাদান। জ্বালিয়ে দেয় সেই স্বতন্ত্র ধূপ, যা থেকে সুরভীত হয় জীবনের অকিঞ্চিতকর অস্তিত্ব।


শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮

সাতদিনে সাত প্রিয় বইঃ প্রথম দিন

খেলাটা মজার, খেলাটা কঠিন। সাতদিনে সাতটি প্রিয় বইএর নাম।

যখন যে বই পড়ি, তখন সেই বইএ ডুবে যাই। বালির পাহাড়ের মতো সে কখনও উঁচু হয়ে ওঠে আবার হাওয়ায় অন্য কোথাও। পরদিন গিয়ে হয়তো সেই পাহাড়কে খুঁজে পাওয়া যায়না।

নিজের শহর থেকে ভিণদেশে পাততাড়ি গোটানোর সময়, বিমান কোম্পানির নিয়ম মেনে মালপত্রের ওজনের সীমা বাঁধা ছিল। তখন আর সব জরুরী বেঁচে থাকার সরঞ্জামের সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার রূপী যে দুটি বই সাথে ছিলেন, তারা হলেন 'শেষের কবিতা' আর 'গীতবিতান'।



শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮

স্বপ্নচূড়া

দিনের খাতায় তার নামতা লেখা
ধানের পাতায় সেই গল্প শেখা
রোদের নিচে উড়ো খবর নিতে
বাড়িয়ে হাত, জনান্তিকে
ঘামের আঙুল যেন দুয়েক ফোঁটা
ফিকে হাসির, অস্তরেখা
মিলিয়ে দিল কোন হাঁসের ডানা
গোপন কথার সে আস্তানা
মরালগ্রীবায় এলো আলোর রেণু
স্বপ্নচূড়ায় সে যে কী দেখিনু?

সোমবার, ২ এপ্রিল, ২০১৮

অপেক্ষা

কোনদিন আড়াল ছিল নাকি?
উষ্ণতায় প্রাণের ঢাকাঢাকি
মেদুর এক ঝড়ের বিকেল বোধহয়
হাঁটতে যেতে আঙুল ছুঁতে হয়
সাইকেলের সামনে সিটে বসে
কাঁপতে থাকে বৃষ্টিফোঁটার দেশে
হঠাৎ আসা রেলগেটের বাধা
নামিয়ে মাথা কালোয় কিম্বা সাদা
সাবধানে, পরীক্ষা শুরু হল
ঘন্টাখানেক আপেক্ষাই কর
তারের ওপর ফড়িং এসে বসে
ভিজে বাতাস বুকের আশেপাশে

বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮

মেঘ জল ঘুম

মেঘ কে, বলি ছুটি
ছোটো ছোটো গুটিশুটি
আকাশের খোলা জানলায়
রোদ্দুর যদি ছলকায়
ভালো আলো ভুলত্রুটি
জলের, কাছে এসো
পাল তুলে স্রোতে ভেসো
বাতাসের ঘুম ওড়নায়
মন মাঝে যদি জানা যায়
পর্দা আড়ালে বোসো
ঘুমের, ডাকে আসে
রোজকার নিঃশ্বাসে
ছেঁড়া রোদ নিয়ে বিছানায়
সব কিছু যদি ভুলে যায়
দেখা হয় ভুল বাসে

সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮

একলা ডানায়

কালের পিঠে পাল খাটিয়ে অনেক বছর পরে
পুরোন পাড়ায় চলতে গিয়ে এমনি চোখে পড়ে
মিলিয়ে গেছে দালান কোঠা পাল্টে গেছে পথ
মহীরুহ নিভিয়ে ওঠা মস্ত ইমারত
চকচকে সেই আলোকদ্যুতি আমার চোখের মাপে
ঘোরলাগা এক জয়ধ্বনি হাততালিতে ডাকে

স্রোতের সাথে বিবর্তনে অনেক প্রিয়মুখ 
বয়স ছাড়াও অন্য কিছু, আপাত অদ্ভুত
যে মনেতে আলয় ছিল, এখন শুধু ভয়
কার পাশে আজ বসবো গিয়ে, বড়ই সংশয়

চোখের শরণ ফুরিয়ে এখন ঘেন্না অবশিষ্ট
ভীড়ের মাঝে একলা ডানা হারায় অনির্দিষ্ট

শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

ঝাপসা সম্পর্ক

দুটো সুপুরী গাছের ফাঁকে দ্বিতীয়ার চাঁদ আটকা পড়ে আছে। নারকেলের ঝিরিঝিরি পাতার ওপর তার আলো ভিজিয়ে দিচ্ছে। টানা ঝিঁঝির ডাক গ্রামের নির্জনতাকে আরও গাঢ় করে। নদীর অন্য পাড় থেকে ভেসে আসছে, কোনো এক উৎসব বাড়ি থেকে ফিরে আসা ব্যান্ড পার্টির কর্নেটের সুর। দলছুট কিছু জোনাকি ঘুরে ঘুরে একবার এই ঝোপ, একবার অন্য। তার মাঝেই ফাল্গুন পূর্ণিমা পার করে একটা ঠান্ডা হাওয়া, মনে করিয়ে দেয় সম্পর্কের ফাটল। আত্মীয়তা, একাত্ব-বোধের মতো কতগুলো অপরিমিত শব্দ, অপ্রাসঙ্গিক মন খারাপের আগুন উসকে দেয়। নিভে যাওয়া উনোনের আঁচ, ইতিহাসের রক্তের উষ্ণতার মতন মিইয়ে গেছে। চেনা মুখেরা সবাই মুখোশের আড়ালে। শিরশিরে ঠান্ডা বাতাসের সাথে ভাঙা চাঁদের সখ্যতা আর প্রিয় মানুষদের ওম দূরতিক্রম্য পাহাড়। সেখানে আলোর খেলাপী সুতো বিস্তৃর্ণ ফসলের ক্ষেতে কুয়াশার চাঁদোয়া হয়ে ভেসে থাকে। কোন মানুষ কার পাশটিতে গিয়ে বসবে বুঝতে পারেনা। আটকা পড়া চাঁদ ক্রমে ঝাপসা হতে থাকে।

শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

যৌথ জীবন


তবু কারা ভালোবাসে
স্বপ্নের এজলাশে
নিয়ে আসে যত দোষত্রুটি
ফিরে যায় ঘুমচোখে
বিষাদকে মনে রেখে
হারানো রাতের খুনসুটি

চেনাতে চিনতে আড়াল
অভ্রস্পর্শী দেওয়াল
অক্ষম হাতে কারুকাজ।
নেই, তবু থেকে যায়
নিঃশ্বাস নিরুপায়
পলি জমে কপালের ভাঁজ

এধারে দাঁড়িয়ে একা
কিছুটা আলোয় ঢাকা
বাকিটা প্রকৃত অন্ধকার
বাতাসের ধীর গতি
প্রলাপের অনুভূতি
দুজনে যুদ্ধে একাকার

ফিরে যায় গৃহকোণে
কতকটা আনমনে
চিরস্থায়ী ভাতের অভ্যেস।
আছে, কিন্তু সব খালি
ইঁটকাঠ ধুলোবালি
শুরুতেই লেখা থাকে শেষ


মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

সময়

পাশাপাশি জানালায়
রোদ লাগা অছিলায়
ঘুম নিয়ে দাঁড়িয়েছি ভোরে
মেঘ তুমি কবেকার
হাতে হাত রাখবার
উড়ো খই চলে যেও দূরে

ভেজা জামা পাল্টায়
শরীরের রাস্তায়
লেগে থাকে দিনগত পাপ
মন খসে অনাবিল
চক্ষুরা সাবলীল
বুকে আসে গোপনীয় তাপ

তবু নাম জানাবার
প্রার্থনা বারবার
এ বিষে কিসে হবে শেষ
চিনে চিনে অনায়াস
খালি হয় ভীড় বাস
ধূসরিত রাজকীয় বেশ

... দিনান্তের অন্বেষণে, জানুয়ারী 2018 সংখ্যা

সোনামাখা বাংলা

কুয়াশায় ছেড়ে যায়
বেদনার নীল রোদ
অসময় জল গায়
ভেঙে পড়ে প্রতিরোধ

চারিদিক শারীরিক
নিভু নিভু সলতে
তব সুখ জাগরুক
কথা কিছু বলতে

এই শব্দ মনে লব্ধ
হারায়নি তো কিছু
এই বই, সাথে লই
হৃদয়ের সমীপেষু

অক্ষর জমে তাই
জল মাটি শাপলা
মাটি ঘেঁষা রোদটুকু
সোনামাখা বাংলা

মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮

একসাথে

হারিয়ে যাচ্ছ? হারতে পারলে কই
ঠিকানা খুঁজতে, হাতে মানচিত্রের বই?
গরল স্বপাকে রন্ধন জানা চাই
যাত্রা শেষে অগুন্তি উড়ো খই

তোমার জানালায় ঝুলে থাকা লাল রোদ
অচেনা আমায় অমৃতের প্রতিশোধ
একি স্বপ্নময় জোনাকির ওড়াউড়ি
প্রজন্ম পেরিয়ে বটের নেমেছে ঝুরি

তোমার দুচোখে সোনালী ধানক্ষেত
ঘুমঘুম মন সেখানেই পেলো সেচ
আবিস্কারের পথেই পথ চলা
একসাথে চুপ আঁধারের কথাবলা

বিয়ে বাড়িতে নদীর সাথে

বিয়েবাড়ি অনেক ভীড়। আত্মীয় অনাত্মীয় মিলে একশোর ওপর পাত পড়ছে দুবেলা। মামাবাড়ি বড় হলেও শীতের কালে একশো মানুষকে ধরানো সম্ভব নয়। সকলে প্রতিবেশীদের বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। গ্রামে এটাই রেওয়াজ। পুরো গ্রামই যেন এক পরিবার। আস্তানা গাড়লাম মামাবাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে। মামাবাড়ির প্রতিবেশীরা, সম্পর্কে সকলেই 'মামা' 'মাসি'। আশেপাশের বাড়িগুলো ইতস্ততঃ আম কাঁঠাল সুপুরি ছায়ায় ঘেরা। একজনের উঠোন অন্যের রান্নাঘর ঘেঁষে। নেই কোন পাঁচিলের সীমানা, মনেরও। বাড়ির উঠোন দিয়ে বয়ে চলে জলঙ্গী। সময় অসময়ে ডুব দিয়ে আসে। নিজস্ব নদী বয়ে চলে তার স্বচ্ছ অবয়ব নিয়ে। নিচ অবধি দেখা যায়। মনেরও যেন তল পাওয়া যায়।

কন্যা বিদায়ের পর উৎসবের তাল কেটে যায়। সূর্যের তেজও যেন কমে আসে। এলোমেলো ছড়িয়ে থাকে শালপাতা, কাগজের কাপ। প্যান্ডেলওয়ালা বাঁশ খুলতে চলে এসেছে। দূর দূর দেশ থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা যে যার ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত। অতিথিদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশীও ছিলেন। তাঁদের চোখে মুখে বিস্ময়, এত লম্বা অনুষ্ঠান আর সেখানে এত রকম সম্পর্কের লতাপাতা! উন্নত দেশে এমন উষ্ণতা কই? আজ সন্ধ্যে নামে মন্থরগতিতে। গতরাতের রোশনাই আর নেই, আকাশ ঢেলে সাজে তারায়। মাথার ওপর মাঘ মাসের কালপুরুষ ঝুলে থাকে। তার খোলা তলোয়ার যেন সম্পর্কের রক্ষক রূপে আশ্বাস দেয়। আগামী প্রজন্ম আসুক, দুধে ভাতে থাকুক  সন্তান। রাত বেশি হলে হিম পড়ে। গাছের পাতা বেয়ে সেই হিম টপটপ করে ঝরে। বাপ মায়ের গোপন কান্নার মতো সে বৃষ্টি।

ঘরের মানুষের মতো যদি একটা ঘরের নদী থাকে, তখন এমনই হয়। আলো ফোটার আগে নদীকে নিমন্ত্রণ জানানো, তুমি এসো কিন্তু, মা। তারপর এয়োস্ত্রীদের জলসইতে যাওয়া, জল আনা, স্নান করা। কিম্বা মন খারাপের, শুধু বসে থাকা। দস্যি দামালদের ক্লান্ত হয়ে নদীর ঘাটে ঘুমিয়ে পড়া। প্রতিটি কাজের মাঝে নদীটি জড়িয়ে থাকে। যেসব পাখিরা এপাড়ে এসেছিল, গোধূলীতে উড়ে যায় ওপাড়ে। সেখানে তার ঘাসে বোনা ছোটো বাসা অপেক্ষায় আছে। আমরাও কোমর বাঁধি। ফিরতে হবে। সাথে লেগে থাকে স্নানের ঘ্রাণ। মাছ এসে সারা গায়ে ঠুকরে দিয়েছে, সেই স্পর্শটুকু জমিয়ে রাখি। ফেরার দিন রাস্তাটা অনেক লম্বা হয়ে যায়। শেষ হতেই চায়না।

রবিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৮

নিরুপায়


    সময় বাঁধনে নিরুপায়
    পদতলে বালু ছুঁয়ে যায়
    আড়াল সরে না সাক্ষাতে
    যেন কে পাশ থেকে ডাকে


    ছেড়ে আসা জলে ভাসাভাসি
    তোমাকেই কাছে নিয়ে আসি
    অস্থির নীল গতিবেগে
    কোন সুতো লেগে নেই দেহে

    হঠাৎ হারিয়ে ফেলে দেখি
    প্ল্যাটফর্মে কেবল একাকী
    দাঁড়িয়ে, উড়ে যাওয়া পাতা
    পিছু পিছু ছুটে, থেমে থাকা

    মলাট ছিঁড়ে যাওয়া বই
    সেখানে আর কেউ নেই
    শিকড়ের ভাঙা অপবাদে
    তবু রাত নামে, একা ছাদে

    সুতো কাটা ঘুড়িরাকাশে
    কবেকার ডাঙাটুকু ভাসে
    সিঁড়ি ছাড়া নেমে আসা গৃহে
    টিঁকে থাকে আবিল নির্মোহে

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

বাজারের বারান্দা


ফেলে রাখা স্যুটকেস, উড়ো ঝড় এলোকেশ
মনে রাখি দম ধরা ঘড়ি
পায়ে পায়ে ঘুমঘোর, রাত জাগা অগোচর
যেতে, না চাইলেও চলি

যেন কোন পারাবার, কাছে দূরে ঘর বার
হাতে পায়ে জমে ওঠা ধুলো
বালু চোরা চারিদিক, জ্বলে নেভে ধিকিধিক
পথিকের নেই চালচুলো

কাছে এসো অনুপম, বুক চোঁয়া উপশম
পলকের সাধ জাগে ডানা
অগভীর স্রোতে ভাসা, মধুহীন ভালোবাসা
প্রিয়মুখ, তবু অচেনা

কিইবা আছে ধারে কাছে, জড়োয়ার নাগপাশে
এ জীবনে শোনা হল না
জানি তুমি, তুমি নও, সচেতন অভিনয়
খেলাঘরে ফাঁকা দোলনা

ব্লগ এবং বই পাওয়ার ঠিকানাঃ https://souravstory.com

 এখন থেকে ব্লগ সহ অন্যান্য সব খবর এবং বই পাওয়ার ঠিকানাঃ https://souravstory.com