বিপণনের দুনিয়া আমাদের জীবনে নতুন মাত্রা আনে। নতুন ফ্যাশন নতুন বাহার নতুন শব্দ। আমদানীকৃত অলঙ্কার আসে সাগর পাড়ের লোনা হাওয়ার সাথে। বনিকের মানদন্ডে যুক্ত রাজদন্ড এখনও পা ফেলে, তবে খুব চুপিসারে আসে। এ রাজত্ব ফেলে আসা সময়ের মতো উচ্চকিত নয়। রাজত্ব বিস্তৃত হয় সমাজের অভ্যন্তরে মননে মেধায় জীবনে। অনায়াসে পরাধীন হয়ে পড়ি, নিজের অজান্তে।
ইংরাজির ‘শপ’ শব্দের অর্থ দোকান। এ শব্দের সাথে মুখ্য যোগ দোকানদারের, তারপর ক্রেতা। বিপণন বিজ্ঞান সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছে। দৃষ্টিকোণ অনুসারিত হচ্ছে বিক্রেতা থেকে ক্রতার দিকে। ‘শপ’-এর ক্রিয়াকরনে ‘শপিং’, বিক্রি না বুঝিয়ে ক্রয়কে বোঝানো হল। আর ‘শপার’ বিক্রেতা না হয়ে হলেন ক্রেতা। কারন পরিবর্তিত পরিবেশে ক্রেতা ভগবান। তার ভজনা করাই তাবড় বিশ্ব বিপণন দুনিয়ার লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও মোক্ষ। আর এই শপিংএর পীঠস্থান হল ‘শপিংমল’। দরজা খুলে ঢুকতে না ঢুকতে গলে গলে পড়ে সুখ। রিনরিনে কোলাহল আর রঙিন আবহাওয়া মুহুর্তে ভুলিয়ে দেবে সমস্ত দুঃখ কষ্ট। পরিসংখ্যান বলে ২০১৩ পর্যন্ত ৫৭০টি এমন শপিংমল আমাদের দেশে তৈরি হয়েছে এবং বলাই বাহুল্য আরও হচ্ছে। আজকের প্রজন্মের কাছে এই দোকানপুজ্ঞগুলো শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, বেড়ানোর, প্রেম করার, সময় কাটানোর জায়গা। অন্যান্য দোকান বাজার ছাড়া সিনেমা, রেস্তোঁরা, হেল্থ ক্লাব, বাচ্চাদের কিডস জোন কি নেই। এক্কেবারে যাদুতে মোড়া সব পেয়েছির আসর বলতে যা বোঝায়, এ যেন তাই।
ইংরাজিতে আরেকটি শব্দবন্ধ আছে ‘মম এন্ড পপ শপ’। অর্থাৎ কিনা মা বাবার দোকান বা পরিবার পরিচালিত ছোট দোকান। ডিমপুকুরে গোবিন্দর বাড়ির পাশের দোকান। যাদের বিশ্বজোড়া শৃঙ্খলবদ্ধ দোকানমালা নেই। একটি ছোট দোকান ঘিরে তাদের বেঁচে থাকা। যে দোকানদার কে গোবিন্দরা সবাই চেনে দামোদর, সুভাষ, অনুপ, আশিস এবং তার বৃদ্ধা মা, শঙ্কর, মিলন, তুলসী, যোগেশ এমন সব কত নাম। অমল কাকুর মনিহারি দোকান তাকে বিজয়ায় প্রণাম করে। বাড়িতে গোবিন্দর বাবা অসুস্থ হলে ফলওয়ালা অনুপ তাকে দেখতে আসে। তিনদিন পরে বাজারে গেলে অনায়াসে ফেরত পায় আগের দিনে ভুল করে ফেলে আসা বিস্কুটের প্যাকেট। কখনো সাইকেল করে শঙ্কর বাড়ি বয়ে দিয়ে আসে ফেলে আসা মাছের থলি, কিম্বা ফেরত দেয় গত সপ্তাহে মাছের জন্য ভুল করে বেশি নিয়ে নেওয়া দুশো টাকা। গোবিন্দ বাজার করতে গেলে খোঁজ নেয়, জয়দেব দুদিন ধরে কেন আসছে না? নদীয়া জেলার সব্জী খুব সুস্বাদু। অনেক মানুষ অনেক দুর থেকে এই বাজারে সব্জি কিনতে আসেন, তার কারন জয়দেব সুদূর সমুদ্রগড় থেকে প্রতিদিন নানান পদ বয়ে নিয়ে আসে এই বাজারে। আবার নিতাইএর মতো ব্যবসায়ী আছে, যারা সুযোগ বুঝে পচা আলু দিয়ে দেয়। পড়শী দোকানদাররা আড়ালে সাবধানও করে দেয়। বাড়িতে বিয়ে বা পরবে এই অনাত্মীয় বাজারওয়ালাও নিমন্ত্রণ পায়। সব মিলিয়ে বাজার শুধু কেনাকাটার নয় একটা সম্পর্কের বুনোট।
পাশাপাশি মহার্ঘ্য শপিংমলের দোকানে যে সব বিক্রেতারা থাকেন, তাঁরা মূলত কর্মচারী। এক ইউনিফর্ম পরা প্রত্যেকে। আলাদা করে চেনার উপায় নেই। তাই বিকিকিনি বাইরে কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনা। একটু খুঁটিয়ে দেখলে বোঝাই যায় দামি বা কেতা দুরস্ত পোষাকের অন্তরালে হয়তো একটি গ্রাম্য গৃহবধূ, যার সাধ্য নেই যে সব পণ্য ব্যবহার করার, সেই সমস্ত পণ্যের গুণকীর্তন করে বিক্রির চেষ্টা করছে। এখানে বিক্রেতাটি থাকেন আড়ালে। তিনি সর্বশক্তিমানের মতো, বিশ্বজোড়া তার বিস্তার, বহুজাতিক তার মালিকানা। তার অসংখ্য চোখ কান, যা প্রতি নিয়তঃ তার বিশ্বস্ত ক্রেতা আর সম্ভাব্য ক্রেতাদের পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। টেলিভিশন, রেডিও, খবরের কাগজ, সাইনবোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে। তাই শপিংমলে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ-বিক্রতাটি বুকে লেবেল লাগানো শুধুমাত্র সেই মহামহিমের প্রতিনিধিমাত্র। তার আলাদা পরিচিতি হতেই পারে না। ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ অনেক অতীত স্বাক্ষর। খুব জটিল মনোবিজ্ঞান আর ব্যবহারিক তথ্য সংগ্রহ করে অনায়াসে বুঝে ফেলে, ক্রেতা কখন ঠিক কি চাইতে পারে বা কেন চাইতে পারে। তার যোগান অব্যর্থ উপায়ে ঠিক সময়ের আগেই তার চোখের সামনে সুদৃশ্য মোড়কে ঝুলিয়ে দেওয়াই এই বিপণন দুনিয়ার মূলমন্ত্র।
সময় তার নিজের নিয়মে গড়িয়ে চলে, যা আগে ঘটেনি তা যে এখন ঘটবে না, কেউ বলতে পারে না। হয়তো সময়ের নিজেরও সেটা বলার স্বাধীনতা নেই। তাই আমরা যা পাই, তাই নিয়ে হেসেখেলে দিন গলিয়ে এগিয়ে যাই। ফেলে আসা দশকের ফেরিওয়ালারা যেমন আজ আর নেই। বেলফুল, আতর, শোনপাপড়ি-সন্দেশ, কেক-লো, কুলফি বরফ এমন কত নানা প্রয়োজনীয় পসরা সাজিয়ে তারা আসতো। তারাও তো আজ বিস্মৃতির গহিনে। পাড়ার বাজারের আব্বাসের মা হরিয়ে গেলে কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হবে-কি হবে-না, কেউ জানে না। তবে ঈদের পর শাকপাতার স্বল্প সম্ভারের মধ্যে থেকে টিফিন কৌটো বার করে কে দেবে? বাড়িতে গড়া পরবের মিষ্টি। সাথে ফোকলা দাঁতে একরাশ আশীর্বাণী। মানুষে মানুষে যোগাযোগ-ই একমাত্র উপায় পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলে। যদি সেই যোগাযোগ হয় কেবল মাত্র কৃত্রিম আর কোন অন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত তবে আশঙ্কা বেড়েই চলে।
ইংরাজির ‘শপ’ শব্দের অর্থ দোকান। এ শব্দের সাথে মুখ্য যোগ দোকানদারের, তারপর ক্রেতা। বিপণন বিজ্ঞান সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছে। দৃষ্টিকোণ অনুসারিত হচ্ছে বিক্রেতা থেকে ক্রতার দিকে। ‘শপ’-এর ক্রিয়াকরনে ‘শপিং’, বিক্রি না বুঝিয়ে ক্রয়কে বোঝানো হল। আর ‘শপার’ বিক্রেতা না হয়ে হলেন ক্রেতা। কারন পরিবর্তিত পরিবেশে ক্রেতা ভগবান। তার ভজনা করাই তাবড় বিশ্ব বিপণন দুনিয়ার লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও মোক্ষ। আর এই শপিংএর পীঠস্থান হল ‘শপিংমল’। দরজা খুলে ঢুকতে না ঢুকতে গলে গলে পড়ে সুখ। রিনরিনে কোলাহল আর রঙিন আবহাওয়া মুহুর্তে ভুলিয়ে দেবে সমস্ত দুঃখ কষ্ট। পরিসংখ্যান বলে ২০১৩ পর্যন্ত ৫৭০টি এমন শপিংমল আমাদের দেশে তৈরি হয়েছে এবং বলাই বাহুল্য আরও হচ্ছে। আজকের প্রজন্মের কাছে এই দোকানপুজ্ঞগুলো শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, বেড়ানোর, প্রেম করার, সময় কাটানোর জায়গা। অন্যান্য দোকান বাজার ছাড়া সিনেমা, রেস্তোঁরা, হেল্থ ক্লাব, বাচ্চাদের কিডস জোন কি নেই। এক্কেবারে যাদুতে মোড়া সব পেয়েছির আসর বলতে যা বোঝায়, এ যেন তাই।
ইংরাজিতে আরেকটি শব্দবন্ধ আছে ‘মম এন্ড পপ শপ’। অর্থাৎ কিনা মা বাবার দোকান বা পরিবার পরিচালিত ছোট দোকান। ডিমপুকুরে গোবিন্দর বাড়ির পাশের দোকান। যাদের বিশ্বজোড়া শৃঙ্খলবদ্ধ দোকানমালা নেই। একটি ছোট দোকান ঘিরে তাদের বেঁচে থাকা। যে দোকানদার কে গোবিন্দরা সবাই চেনে দামোদর, সুভাষ, অনুপ, আশিস এবং তার বৃদ্ধা মা, শঙ্কর, মিলন, তুলসী, যোগেশ এমন সব কত নাম। অমল কাকুর মনিহারি দোকান তাকে বিজয়ায় প্রণাম করে। বাড়িতে গোবিন্দর বাবা অসুস্থ হলে ফলওয়ালা অনুপ তাকে দেখতে আসে। তিনদিন পরে বাজারে গেলে অনায়াসে ফেরত পায় আগের দিনে ভুল করে ফেলে আসা বিস্কুটের প্যাকেট। কখনো সাইকেল করে শঙ্কর বাড়ি বয়ে দিয়ে আসে ফেলে আসা মাছের থলি, কিম্বা ফেরত দেয় গত সপ্তাহে মাছের জন্য ভুল করে বেশি নিয়ে নেওয়া দুশো টাকা। গোবিন্দ বাজার করতে গেলে খোঁজ নেয়, জয়দেব দুদিন ধরে কেন আসছে না? নদীয়া জেলার সব্জী খুব সুস্বাদু। অনেক মানুষ অনেক দুর থেকে এই বাজারে সব্জি কিনতে আসেন, তার কারন জয়দেব সুদূর সমুদ্রগড় থেকে প্রতিদিন নানান পদ বয়ে নিয়ে আসে এই বাজারে। আবার নিতাইএর মতো ব্যবসায়ী আছে, যারা সুযোগ বুঝে পচা আলু দিয়ে দেয়। পড়শী দোকানদাররা আড়ালে সাবধানও করে দেয়। বাড়িতে বিয়ে বা পরবে এই অনাত্মীয় বাজারওয়ালাও নিমন্ত্রণ পায়। সব মিলিয়ে বাজার শুধু কেনাকাটার নয় একটা সম্পর্কের বুনোট।
পাশাপাশি মহার্ঘ্য শপিংমলের দোকানে যে সব বিক্রেতারা থাকেন, তাঁরা মূলত কর্মচারী। এক ইউনিফর্ম পরা প্রত্যেকে। আলাদা করে চেনার উপায় নেই। তাই বিকিকিনি বাইরে কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনা। একটু খুঁটিয়ে দেখলে বোঝাই যায় দামি বা কেতা দুরস্ত পোষাকের অন্তরালে হয়তো একটি গ্রাম্য গৃহবধূ, যার সাধ্য নেই যে সব পণ্য ব্যবহার করার, সেই সমস্ত পণ্যের গুণকীর্তন করে বিক্রির চেষ্টা করছে। এখানে বিক্রেতাটি থাকেন আড়ালে। তিনি সর্বশক্তিমানের মতো, বিশ্বজোড়া তার বিস্তার, বহুজাতিক তার মালিকানা। তার অসংখ্য চোখ কান, যা প্রতি নিয়তঃ তার বিশ্বস্ত ক্রেতা আর সম্ভাব্য ক্রেতাদের পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। টেলিভিশন, রেডিও, খবরের কাগজ, সাইনবোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে। তাই শপিংমলে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ-বিক্রতাটি বুকে লেবেল লাগানো শুধুমাত্র সেই মহামহিমের প্রতিনিধিমাত্র। তার আলাদা পরিচিতি হতেই পারে না। ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ অনেক অতীত স্বাক্ষর। খুব জটিল মনোবিজ্ঞান আর ব্যবহারিক তথ্য সংগ্রহ করে অনায়াসে বুঝে ফেলে, ক্রেতা কখন ঠিক কি চাইতে পারে বা কেন চাইতে পারে। তার যোগান অব্যর্থ উপায়ে ঠিক সময়ের আগেই তার চোখের সামনে সুদৃশ্য মোড়কে ঝুলিয়ে দেওয়াই এই বিপণন দুনিয়ার মূলমন্ত্র।
সময় তার নিজের নিয়মে গড়িয়ে চলে, যা আগে ঘটেনি তা যে এখন ঘটবে না, কেউ বলতে পারে না। হয়তো সময়ের নিজেরও সেটা বলার স্বাধীনতা নেই। তাই আমরা যা পাই, তাই নিয়ে হেসেখেলে দিন গলিয়ে এগিয়ে যাই। ফেলে আসা দশকের ফেরিওয়ালারা যেমন আজ আর নেই। বেলফুল, আতর, শোনপাপড়ি-সন্দেশ, কেক-লো, কুলফি বরফ এমন কত নানা প্রয়োজনীয় পসরা সাজিয়ে তারা আসতো। তারাও তো আজ বিস্মৃতির গহিনে। পাড়ার বাজারের আব্বাসের মা হরিয়ে গেলে কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হবে-কি হবে-না, কেউ জানে না। তবে ঈদের পর শাকপাতার স্বল্প সম্ভারের মধ্যে থেকে টিফিন কৌটো বার করে কে দেবে? বাড়িতে গড়া পরবের মিষ্টি। সাথে ফোকলা দাঁতে একরাশ আশীর্বাণী। মানুষে মানুষে যোগাযোগ-ই একমাত্র উপায় পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলে। যদি সেই যোগাযোগ হয় কেবল মাত্র কৃত্রিম আর কোন অন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত তবে আশঙ্কা বেড়েই চলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন