বৃষ্টিতে নেতিয়ে গেছে রাস্তা। মিইয়ে গেছে মন। নবমী থেকেই যাই যাই। ভাসানে খানিক উদ্দাম উন্মাদনার ক্লাইম্যাক্স। ডিজে-বাবুর হাত
ধরে প্রতিমা নিরঞ্জন সাঙ্গ হল। তারপর ক্রমে উৎসব রাত শেষ হয়। অস্পষ্ট হয়ে পড়ে
উজ্জ্বল আলোর রোশনাই। সময়ের হাত ধরে আবার ফিরে আসা প্রতিদিনের শহরে। ইতস্ততঃ ভাঙা
মন্ডপের কাঠামো জেগে থাকে। যেমন জেগে থাকে ভাঙা মন। এরপর আবার রোজকার আপিসযাত্রীর
গায়ে নতুন পোশাক, তবু কর্মক্ষেত্রে যেতে মন লাগেনা। ফেলে আসা আলোর স্মৃতি বুকে
নিয়ে আরেকবার অপেক্ষা শুরু 'আসছে বছর আবার হবে।' যে বাঙালী ঘরে ফিরেছিল, তার
প্রবাস-ফেরার গাড়ির সময় হয়ে এল। তবু চলে যাওয়ার উৎসব পালন হয়, 'বিজয়া দশমী'। এত
বিষাদের পরও কেন মিষ্টিমুখ? পৌরাণিক ব্যাখ্যায়, দশানন ধরাশায়ী আর রামচন্দ্রের
বিজয়। সার্থক হল তাঁর অকাল বোধন। এই বিজয়া তাকেই স্মরণ করে। এরপর রাম দেশে ফিরবেন,
ঠিক একমাস পর হবে আরেক দফা বিজয় উদযাপন দেওয়ালির আলোক মালায়। আর, যার এবারও পুজোতে
ঘরে ফেরা হলনা, তাদের আশা, 'ঠিক পরের বার'। ফোন, হোয়াটসাপ, ফেসবুকে প্রীতি বিনিময়
চলতেই থাকে, সামনে এলে উষ্ণ আলিঙ্গন।
বাঙলায় দুর্গার অবস্থান ঠিক 'পুজো' নয়, মেয়ের ঘরে ফেরা। তাকে আবার
বিদায় জানাতে বাপ মায়ের কষ্ট হয়। একবার এমন আবেগে মথুরবাবু দশমীতেও মা-কে বিসর্জন
দেবেন না বলে স্থির করেন। শ্রীরমকৃষ্ণ তাকে বুঝিয়ে বলেন, মায়ের কখনও সন্তানের সাথে
বিচ্ছেদ হয়না, "এ ক'দিন বাইরের দালানে বসে মা পূজা নিয়েছেন, আজ থেকে
হৃদয়মন্দিরে বসে পূজা নেবেন।" যার সাথে মায়ের দেখাই হল না, সেও হয়তো খুঁজতে
থাকে। কোথাও মনের ভেতর মা অবস্থান করছেন, স্নেহময়ী আঁচল বিছিয়ে, সে আঁচল ভাগ হলেও
কম পড়ে না।
শুভ বিজয়া, সবাই ভালো থাকবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন