আমাকে প্রধান শিক্ষকের ঘরে ডেকে পাঠানো হল, কেন আজ মনে নেই। সাথে নিম্নবুনিয়াদী থেকে প্রাপ্ত শেষ ফলাফলের কাগজটা ছিল। ওটাই সম্ভবতঃ মাঠের স্কুলে আমার প্রথমদিন। প্রধান শিক্ষক অমরশঙ্কর, যাঁর গেরুয়া প্রবর্তিত নাম হয়েছে স্বামী বোধাতিতানন্দ। তবে একেবারে ছেলেবেলায় তাঁকে অমরশঙ্কর নামে চিনেছিলাম, সেই নামটিতে তিনি সারা জীবন পরিচিত হয়ে ছিলেন, অন্ততঃ আমাদের সময়ের কাছে। ঘরের ভিতর আরেকজন বর্ষীয়াণ শিক্ষক ছিলেন। পরে জেনেছি, ওঁনার নাম শশাঙ্ক শেখর তেওয়ারি, ছোট করে এস.এস.টি স্যার। আমার ফলাফলের কাগজ হাতে নিয়ে বলেছিলেন, ‘মিডিওকার’। সেই মুহুর্তে মানে বুঝতে পারিনি। পরে বাংলা প্রতিশব্দ জেনে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। নিজেকে নিয়ে ভাবতে আর গৌরবান্বিত হতে অনেকেরই ইচ্ছা থাকে। অবচেতনে হয়তো আমারও তেমন কোন আকাঙ্খা ছিল। মুখের ওপর কেউ আমায় নেহাত মাঝারি বলায়, দশ বছরের বালক মনে চিরস্থায়ী দাগ কেটে যায়। আজও সেই দিনটার কথা মনের মধ্যে বয়ে নিয়ে চলেছি। আবার পুরো স্কুল জীবনে, এই এস.এস.টি স্যারের কাছেই আরেকটি মন্তব্য পেয়ছিলাম। একই সাথে সেই দিনটাও স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে। এস.এস.টি স্যার বাংলা পড়াতেন। সেই সময়, আমাদের স্কুলে পড়ানোর ধরনটা ছিল, খুব সাবধানী। স্যারেরা নিজেরাই প্রশ্ন এবং উত্তর লিখে দিতেন। ছাত্রর দায়িত্ব ছিল সেটা মুখস্থ করে খাতায় ওগড়ানো। চেনা লেখা পেলে তবেই ভালো নম্বর আসত, নচেৎ নয়। আমি ছিলাম ফাঁকিবাজ ছাত্র। গড়গড়িয়ে স্যারের লেখা মুখস্থ করাতে বড় আলস্য। যা বুঝতাম নিজে নিজেই লেখার চেষ্টা করতাম। এমনই একদিন আমার কোন একটি উত্তর পত্র দেখে স্যার বলেছিলেন, “ক্লাসের মধ্যে একমাত্র ছাত্র, যে মৌলিক রচনা লিখতে পারে”। অচিরেই বুঝতাম স্যার আমায় একটু স্নেহের চোখে দেখছেন।
স্কুলের মধ্যেই সিনেমা হল। আমাদের কাছে ছিল বিষ্ময়! বিবেকানন্দ হল, শুধুমাত্র সিনেমা হল নয়। নিয়মিত আবৃত্তি, গান, বিতর্ক, বক্তৃতা প্রতিযোগিতার অঙ্গন। আর প্রতিটি অনুষ্ঠানের মূল কান্ডারী ছিলেন এস.এস.টি স্যার। ছেলেদের মধ্যে মৌলিক বিদ্যাবৃত্তির চর্চার প্রতি তাঁর অপরিসীম উৎসাহ। সঙ্গে আরেকজন অল্প বয়সী উদ্যোমী শিক্ষক যোগ দিলেন, তাঁর নাম স্বরূপ নন্দ, সংক্ষেপে এস.এন। একবার এস.এন স্যার দুই কবিয়ালের লড়াই করার মতো কবিতায় গান বেঁধে দিলেন। ব্যাস সেই নিয়ে তৈরি হল কবির লড়াই। আশ্রমের দিপক বাজাত ঢোল আর আরেকজন কাঁসর। কবিয়ালের ভূমিকায় কারা অভিনয় করত, এখন আর মনে নেই। তবে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সেই পালা। বাৎসরিক উৎসব প্রাঙ্গন সহ একাধিকবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই কবির লড়াইএর মহড়ার সময় আমিও অনেক সময় থেকেছি কবিতা, বক্তৃতা বা অন্য কোন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির জন্য। শুনে শুনে পুরোটা মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। আজও বেশ কয়েকটা পদ মনে আছে। বিবেকানন্দ হলের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে নানা অজুহাতে মঞ্চে থাকার সুযোগ মিলত, কখনও প্রতিযোগী বা কখনও সঞ্চালক রূপে। এই অভ্যাসটি পরবর্তী ক্ষেত্রে মঞ্চভীতি কাটিয়ে দিতে পেরেছিল। ‘পাব্লিক স্পিকিং’ বা কোন দলের সামনে কিছু বলতে অনেক বিদগ্ধ মানুষেরও অনেক সমস্যা হয়, বিবেকানন্দ হলের সেই দিনগুলো ভিত গড়ে দিয়েছিল।
মাঠের স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে ভীতিপ্রদ ছিলেন পি.এম স্যার। পুরো নামা জানার সহস হয়নি কখনও। স্যার কে তেমন মারধর বা বকাবকি করতেও কখনও দেখিনি। তবু ধুতি পাঞ্জাবী পরা এই স্যার ছিলেন যেন সাক্ষাৎ বিভীষিকা। বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেলেই ক্লাসের কোলাহল থেমে যেত। এমন নৈঃশব্দ সৃষ্টিকারী তিনজন ছিলেন। পি.এম স্যার ছাড়া হাইস্কুলের সন্তোষবাবু এবং স্বয়ং অমর শঙ্কর। অন্য দুজন বেত হাতেও সমান দক্ষ ছিলেন।
দত্ত স্যার ভূগোল পড়াতেন। একবার বোর্ডে ভারতবর্ষের ম্যাপ এঁকেছিলেন। কেউ একজন খুব বিষ্ময়সূচক মুখে জিজ্ঞেস করেছিল, ওটা কোন পাখির ছবি কি না? স্যার রেগে তাকে ক্লাসের বাইরে বার করে দেন। নিম্নবুনিয়াদী তে শাস্তি পাওয়া ভয়ের ব্যাপার ছিল, একটু উঁচু ক্লাসে উঠে শাস্তিটাও বেশ মজার হয়ে উঠল। গৌর ভুঁইয়া (জি.বি.) নামে একজন শিক্ষক ছিলেন। তার কাছে শাস্তি পাওয়ার জন্য রীতিমত হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। খুব নিরীহ প্রকৃতির ছোটখাটো চেহারার মানুষ ছিলেন জি.বি.। বেশিরভাগ ছাত্র তখন তার চেয়ে উচ্চতায় বেশি হয়ে গেছে। ক্লাসে বেত নিয়ে আসতেন। বেত কে উনি ‘ছড়ি’ বলতেন। ছেলেরা অন্যায় করলে সেই ছড়ি দিয়ে হাতে আঘাত করতেন। বড় বড় ছেলেদের হাতের নাগাল পেতে তাঁকে লাফিয়ে লাফিয়ে প্লাটফর্মের ওপর উঠতে হত, সেই দেখেই আমাদের আমোদের শেষ ছিলনা।
শুভ্রজিৎ বলে এক সহপাঠী আমার পাশেই বসত। তার খাতাপত্র বই একটু অগোছালো থাকত। হাতের লেখাটি যত-না খারাপ ছিল, খাতাটি তার চেয়ে বেশি কাটাকুটি করে, কালি ফেলে, মলাট ছিঁড়ে, কাগজ কুঁচকে একটা অদ্ভুত দর্শন করে রাখত। ওর নিজের চেহারা ছবিতেও এমন ঈশারা থাকত। জামায় কালির দাগ, প্যান্ট থেকে অর্দ্ধেক গোঁজা বেরিয়ে পড়েছে, জুতোয় কালি নেই, ফিতে খোলা। সব মিলিয়ে এলোমেলো এই ছেলেটিকে সুকুমার বর্ণিত দাশুর সাথে তুলনা করা যেত। একদিন ক্লাসে এন.এন.এস. স্যার পড়াচ্ছেন। কিছু একটা লিখতে দিয়েছিলেন। সবাই খাতা জমা দিয়েছি। স্যার একে একে দেখছেন আর মন্তব্য করছেন। শুভ্রজিৎ-এর খাতাটি, মরা-ইঁদুর ধরেছেন এমন মুখ করে তুলে বললেন, “এটা কি? এমন খাতা দিবি তো, ছুঁড়ে ফেলে দেব”। বলে সত্যিই মাটিতে ফেলে দিলেন। শুভ্রজিৎ অম্লান মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ছুঁড়ে ফেললে, আবার কুড়িয়ে নিয়ে আসব”। এই বলে একহাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে গিয়ে খাতাটি মাটি থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এল। আমরা প্রত্যেকেই যখন মোটামুটি ধোপদুরস্ত হয়ে স্কুলে যেতাম, এমন কিছু নিশ্চই ছিল যা শুভ্রজিৎ কে অমন আলুথালু করে রাখত। সে বয়সে অতটা বোঝা বা জানার উপায় ছিল না।
বীশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য বলে একজন অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন। দীর্ঘদেহী এই মানুষটা অন্যদের থেকে আলাদা ছিলেন। খানিক আপনভোলা বিজ্ঞানীর মতো ছিল তাঁর ব্যবহার। একটি কাল্পনিক ছাত্রের গল্প তিনি খুব শোনাতেন, মূলতঃ আমাদের সেই ছাত্রটির সাথে তুলনা করতেই ছিল সেই গল্পের আয়োজন। তিনটি বিষয়ে পরীক্ষাতে ছাত্রটি একশোর মধ্যে যথাক্রমে শূণ্য শূণ্য এবং ছয় পেয়েছে। অথচ খুব আনন্দের সাথে নাচতে নাচতে “আমি শূণ্য শূণ্য ছয় পেয়েছি” বলে বাড়ি ফেরে। ছাত্রটির নম্বর সম্পর্কে কোন বোধ তৈরি হয়নি। ওই সময় আনন্দবাজার পত্রিকাতে সাপ্তাহিক শব্দজব্দ বা ক্রসওয়ার্ড বেরত। আর সঠিক জবাব দিয়ে চিঠি দিলে, ওরা পরবর্তী সপ্তাহে প্রথম কয়েকটি প্ররকের নাম ছাপাতেন। ওই সময় ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখবার দূরন্ত বাসনা ছিল। সঠিক উত্তর দেবার জন্য, মাঝেমাঝেই আমার নাম ছাপা হত। পড়াশুনায় ভালো হলে স্যারেদের কাছে আসা যায়। আমার বেলায় তা খুব একটা খাটেনি। লক্ষ্য করলাম বি.বি. স্যারও শব্দজব্দ করেন। ওই সূত্রে আমাদের মধ্যে কিছুটা ভাব হয়েছিল। অনেকবার আটকে যাওয়া শব্দের সমাধান ওনার কাছ থেকে জেনে নিতাম।
এইসবই খুব অকিঞ্চিৎকর অভিজ্ঞতা। পাঠকের কোন উপকারে আসবে না। ফিরে দেখার মধ্যে একটা অনুরণন হয়, যা কোথাও যেন ফেলে আসা সময় কে আবার ছুঁইয়ে দেয়।
স্কুলের মধ্যেই সিনেমা হল। আমাদের কাছে ছিল বিষ্ময়! বিবেকানন্দ হল, শুধুমাত্র সিনেমা হল নয়। নিয়মিত আবৃত্তি, গান, বিতর্ক, বক্তৃতা প্রতিযোগিতার অঙ্গন। আর প্রতিটি অনুষ্ঠানের মূল কান্ডারী ছিলেন এস.এস.টি স্যার। ছেলেদের মধ্যে মৌলিক বিদ্যাবৃত্তির চর্চার প্রতি তাঁর অপরিসীম উৎসাহ। সঙ্গে আরেকজন অল্প বয়সী উদ্যোমী শিক্ষক যোগ দিলেন, তাঁর নাম স্বরূপ নন্দ, সংক্ষেপে এস.এন। একবার এস.এন স্যার দুই কবিয়ালের লড়াই করার মতো কবিতায় গান বেঁধে দিলেন। ব্যাস সেই নিয়ে তৈরি হল কবির লড়াই। আশ্রমের দিপক বাজাত ঢোল আর আরেকজন কাঁসর। কবিয়ালের ভূমিকায় কারা অভিনয় করত, এখন আর মনে নেই। তবে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সেই পালা। বাৎসরিক উৎসব প্রাঙ্গন সহ একাধিকবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই কবির লড়াইএর মহড়ার সময় আমিও অনেক সময় থেকেছি কবিতা, বক্তৃতা বা অন্য কোন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির জন্য। শুনে শুনে পুরোটা মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। আজও বেশ কয়েকটা পদ মনে আছে। বিবেকানন্দ হলের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে নানা অজুহাতে মঞ্চে থাকার সুযোগ মিলত, কখনও প্রতিযোগী বা কখনও সঞ্চালক রূপে। এই অভ্যাসটি পরবর্তী ক্ষেত্রে মঞ্চভীতি কাটিয়ে দিতে পেরেছিল। ‘পাব্লিক স্পিকিং’ বা কোন দলের সামনে কিছু বলতে অনেক বিদগ্ধ মানুষেরও অনেক সমস্যা হয়, বিবেকানন্দ হলের সেই দিনগুলো ভিত গড়ে দিয়েছিল।
মাঠের স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে ভীতিপ্রদ ছিলেন পি.এম স্যার। পুরো নামা জানার সহস হয়নি কখনও। স্যার কে তেমন মারধর বা বকাবকি করতেও কখনও দেখিনি। তবু ধুতি পাঞ্জাবী পরা এই স্যার ছিলেন যেন সাক্ষাৎ বিভীষিকা। বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেলেই ক্লাসের কোলাহল থেমে যেত। এমন নৈঃশব্দ সৃষ্টিকারী তিনজন ছিলেন। পি.এম স্যার ছাড়া হাইস্কুলের সন্তোষবাবু এবং স্বয়ং অমর শঙ্কর। অন্য দুজন বেত হাতেও সমান দক্ষ ছিলেন।
দত্ত স্যার ভূগোল পড়াতেন। একবার বোর্ডে ভারতবর্ষের ম্যাপ এঁকেছিলেন। কেউ একজন খুব বিষ্ময়সূচক মুখে জিজ্ঞেস করেছিল, ওটা কোন পাখির ছবি কি না? স্যার রেগে তাকে ক্লাসের বাইরে বার করে দেন। নিম্নবুনিয়াদী তে শাস্তি পাওয়া ভয়ের ব্যাপার ছিল, একটু উঁচু ক্লাসে উঠে শাস্তিটাও বেশ মজার হয়ে উঠল। গৌর ভুঁইয়া (জি.বি.) নামে একজন শিক্ষক ছিলেন। তার কাছে শাস্তি পাওয়ার জন্য রীতিমত হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। খুব নিরীহ প্রকৃতির ছোটখাটো চেহারার মানুষ ছিলেন জি.বি.। বেশিরভাগ ছাত্র তখন তার চেয়ে উচ্চতায় বেশি হয়ে গেছে। ক্লাসে বেত নিয়ে আসতেন। বেত কে উনি ‘ছড়ি’ বলতেন। ছেলেরা অন্যায় করলে সেই ছড়ি দিয়ে হাতে আঘাত করতেন। বড় বড় ছেলেদের হাতের নাগাল পেতে তাঁকে লাফিয়ে লাফিয়ে প্লাটফর্মের ওপর উঠতে হত, সেই দেখেই আমাদের আমোদের শেষ ছিলনা।
শুভ্রজিৎ বলে এক সহপাঠী আমার পাশেই বসত। তার খাতাপত্র বই একটু অগোছালো থাকত। হাতের লেখাটি যত-না খারাপ ছিল, খাতাটি তার চেয়ে বেশি কাটাকুটি করে, কালি ফেলে, মলাট ছিঁড়ে, কাগজ কুঁচকে একটা অদ্ভুত দর্শন করে রাখত। ওর নিজের চেহারা ছবিতেও এমন ঈশারা থাকত। জামায় কালির দাগ, প্যান্ট থেকে অর্দ্ধেক গোঁজা বেরিয়ে পড়েছে, জুতোয় কালি নেই, ফিতে খোলা। সব মিলিয়ে এলোমেলো এই ছেলেটিকে সুকুমার বর্ণিত দাশুর সাথে তুলনা করা যেত। একদিন ক্লাসে এন.এন.এস. স্যার পড়াচ্ছেন। কিছু একটা লিখতে দিয়েছিলেন। সবাই খাতা জমা দিয়েছি। স্যার একে একে দেখছেন আর মন্তব্য করছেন। শুভ্রজিৎ-এর খাতাটি, মরা-ইঁদুর ধরেছেন এমন মুখ করে তুলে বললেন, “এটা কি? এমন খাতা দিবি তো, ছুঁড়ে ফেলে দেব”। বলে সত্যিই মাটিতে ফেলে দিলেন। শুভ্রজিৎ অম্লান মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ছুঁড়ে ফেললে, আবার কুড়িয়ে নিয়ে আসব”। এই বলে একহাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে গিয়ে খাতাটি মাটি থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এল। আমরা প্রত্যেকেই যখন মোটামুটি ধোপদুরস্ত হয়ে স্কুলে যেতাম, এমন কিছু নিশ্চই ছিল যা শুভ্রজিৎ কে অমন আলুথালু করে রাখত। সে বয়সে অতটা বোঝা বা জানার উপায় ছিল না।
বীশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য বলে একজন অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন। দীর্ঘদেহী এই মানুষটা অন্যদের থেকে আলাদা ছিলেন। খানিক আপনভোলা বিজ্ঞানীর মতো ছিল তাঁর ব্যবহার। একটি কাল্পনিক ছাত্রের গল্প তিনি খুব শোনাতেন, মূলতঃ আমাদের সেই ছাত্রটির সাথে তুলনা করতেই ছিল সেই গল্পের আয়োজন। তিনটি বিষয়ে পরীক্ষাতে ছাত্রটি একশোর মধ্যে যথাক্রমে শূণ্য শূণ্য এবং ছয় পেয়েছে। অথচ খুব আনন্দের সাথে নাচতে নাচতে “আমি শূণ্য শূণ্য ছয় পেয়েছি” বলে বাড়ি ফেরে। ছাত্রটির নম্বর সম্পর্কে কোন বোধ তৈরি হয়নি। ওই সময় আনন্দবাজার পত্রিকাতে সাপ্তাহিক শব্দজব্দ বা ক্রসওয়ার্ড বেরত। আর সঠিক জবাব দিয়ে চিঠি দিলে, ওরা পরবর্তী সপ্তাহে প্রথম কয়েকটি প্ররকের নাম ছাপাতেন। ওই সময় ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখবার দূরন্ত বাসনা ছিল। সঠিক উত্তর দেবার জন্য, মাঝেমাঝেই আমার নাম ছাপা হত। পড়াশুনায় ভালো হলে স্যারেদের কাছে আসা যায়। আমার বেলায় তা খুব একটা খাটেনি। লক্ষ্য করলাম বি.বি. স্যারও শব্দজব্দ করেন। ওই সূত্রে আমাদের মধ্যে কিছুটা ভাব হয়েছিল। অনেকবার আটকে যাওয়া শব্দের সমাধান ওনার কাছ থেকে জেনে নিতাম।
এইসবই খুব অকিঞ্চিৎকর অভিজ্ঞতা। পাঠকের কোন উপকারে আসবে না। ফিরে দেখার মধ্যে একটা অনুরণন হয়, যা কোথাও যেন ফেলে আসা সময় কে আবার ছুঁইয়ে দেয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন