বর্ষা নামে হৈচৈ করে। কারো কথা শুনতে দেয় না। রাস্তা জুড়ে কালো জল আর দু ধারের সবুজ গাছপালার বিরামহীন ভিজে যাওয়া। বেশ কিছু গবাদী প্রাণী গাছের নিচে গায়ে গায়ে ঘেঁষে থাকে। নির্বিকার চোখগুলো ঠিক করে পড়াও যাচ্ছেনা। শহর থেকে একটু দূরে, নতুন শিল্প নগরী বলে চিহ্নিত। যাওয়া কাজের সূত্রেই। এক টানা দেওয়া লম্বা মাঠের ওপর আকাশ কেমন ঝুঁকে পরে জল ঢালছে। কাজের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে জলের ছাট এসে যায়। নিরালম্ব মন ভিজে কাকের মত জড়সড় হয়ে বসে। মাঠে উঁচু উঁচু ঘাস। তার গায় বেয়ে জল ডিঙিয়ে যাচ্ছে ঢোঁড়া সাপ।
টাকা তুলতে একটি এটিএম-এ। লম্বা লাইন। বৃষ্টি একক ভাবে জানান দিয়ে চলেছে। একটা মাত্র যন্ত্র কাজ করছে। বেশ ভীড় জমেছে। আসে পাশে লোকজন বেশিরভাগ শ্রমজীবি হিন্দিভাষী মানুষ। এমন দুটি অল্প বয়সী ছেলে গল্প করছে। হিন্দী বাচনভঙ্গীতে বলে, "বাবুরাম সাপুরে, কোথা যাস বাপুরে। আয় বাবা দেখে যা, দুটো সাপ রেখে যা।" আমি চমকে তাকাই। একটু আগের ঢোঁড়া সাপটি নিজের অস্তিত্ব রেখে গেছে। আমার চোখের আতিথ্য দেখে, ছেলেটি উৎসাহ পায়। বলে, আরও একটা কবিতা জানি। বুঝতে পারি, অন্য ছেলেটি একেবারে বাংলা জানেনা। অতটা আনন্দ পাচ্ছে না। জিজ্ঞেস করে, ফারসি কোন কবিতা জানে কি না। প্রথম ছেলেটি অদমনীয়। এবার, বাইরে বৃষ্টি দেখে ভাঙা বাংলায় কবিতা বলে, "বিষ্টি পোরে টাপুর টুপুর নোদে আলো বান"। আমি মন দিয়ে ফেলি, ভাবি পরের লাইনগুলো ধরিয়ে দি। ছেলে ভোলানো ছড়া। কেউ কোনদিন হয়তো কানে দিয়েছিল। আবার নিজে থেকে বলে, "দুসরা লাইন ভি থা, ঝাপসা গাছপালা"। এবার আমার গা ছমছম করে ওঠে। এতো রবিঠাকুর! আমি এবার সত্যি ভিজে যাই। আমার প্রাণের একটি তার ছেলেটি হঠাৎ করে ছুঁয়ে দিল, নিজের অজান্তে।
“দিনের আলো নিবে এল,
সুয্যি ডোবে - ডোবে।
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে
চাঁদের লোভে লোভে।
মেঘের উপর মেঘ করেছে-
রঙের উপর রঙ,
মন্দিরেতে কাঁসর ঘন্টা।
বাজল ঠঙ ঠঙ।
ও পারেতে বিষ্টি এল,
ঝাপসা গাছপালা।
এ পারেতে মেঘের মাথায়
একশো মানিক জ্বালা।
বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান-
'বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান' ”
দিন কাটিয়ে সন্ধ্যে নামার আগে শহরে ফেরার পথে। বর্ষার এখনও কোন বিরতি নেই। সমস্ত জমে থাকা ভালো লাগা, না শুকোনো জামার মত তিতকুটে। শহরের চারিদিকে জল জল আর জল। তার মধ্য দিয়ে গাড়ি চলছে। জলযানের দুলুনি অকারণ ভীতিপ্রদ হয়ে যায়। আরেক দফা আলাপচারি শেষ হয়, তখন সন্ধ্যে গড়িয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়া সর্ষেদানার মত ভেজা মানুষ, ভেজা ছাতা, ছপ ছপ। ফুটপাথ কোথায়, কোথায় নিকাশি নালা আর কোথায় বা রাস্তা, সব একাকার। তার মধ্যেই হা পিত্যেশ করে ভাড়া-গাড়ির খোঁজ। ফোন-গাড়িরা বেপাত্তা। সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে, অনুনয় করলেও দাঁড়ায় না। শেষে এক বৃদ্ধ ট্যাক্সিওয়ালা রাজি হলেন। আমরা সবে উঠেছি, কোথা থেকে আর একটি লোক দৌড়ে এসে বলল, একটু বড় রাস্তা অবধি নামিয়ে দিন, সামনে অনেক জল। তারপর যানজট জল পার হয়ে আপিস এলাম, রাত তখন আটটা। গাড়িতে ফোন ফেলে নেমে পড়েছি। সেই ট্যাক্সি চালক আবার এসে ফেরত দিয়ে গেলেন। তারপর আপিস করে, এক শহর ভরা জল ডিঙিয়ে, গাড়ি চালিয়ে বাড়ি আসা। গাড়ি ধীরে চলছে। প্রায় দু ঘন্টা লাগল ঘরে ঢুকতে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘুরতে হল অনেক। আটকে যেতে পারতাম, যেকোন জায়গায়। ইষ্টনাম জপতে জপতে ফেরা। রাতের শহরে. সে আরেক রোমহর্ষক অধ্যায়।
টাকা তুলতে একটি এটিএম-এ। লম্বা লাইন। বৃষ্টি একক ভাবে জানান দিয়ে চলেছে। একটা মাত্র যন্ত্র কাজ করছে। বেশ ভীড় জমেছে। আসে পাশে লোকজন বেশিরভাগ শ্রমজীবি হিন্দিভাষী মানুষ। এমন দুটি অল্প বয়সী ছেলে গল্প করছে। হিন্দী বাচনভঙ্গীতে বলে, "বাবুরাম সাপুরে, কোথা যাস বাপুরে। আয় বাবা দেখে যা, দুটো সাপ রেখে যা।" আমি চমকে তাকাই। একটু আগের ঢোঁড়া সাপটি নিজের অস্তিত্ব রেখে গেছে। আমার চোখের আতিথ্য দেখে, ছেলেটি উৎসাহ পায়। বলে, আরও একটা কবিতা জানি। বুঝতে পারি, অন্য ছেলেটি একেবারে বাংলা জানেনা। অতটা আনন্দ পাচ্ছে না। জিজ্ঞেস করে, ফারসি কোন কবিতা জানে কি না। প্রথম ছেলেটি অদমনীয়। এবার, বাইরে বৃষ্টি দেখে ভাঙা বাংলায় কবিতা বলে, "বিষ্টি পোরে টাপুর টুপুর নোদে আলো বান"। আমি মন দিয়ে ফেলি, ভাবি পরের লাইনগুলো ধরিয়ে দি। ছেলে ভোলানো ছড়া। কেউ কোনদিন হয়তো কানে দিয়েছিল। আবার নিজে থেকে বলে, "দুসরা লাইন ভি থা, ঝাপসা গাছপালা"। এবার আমার গা ছমছম করে ওঠে। এতো রবিঠাকুর! আমি এবার সত্যি ভিজে যাই। আমার প্রাণের একটি তার ছেলেটি হঠাৎ করে ছুঁয়ে দিল, নিজের অজান্তে।
“দিনের আলো নিবে এল,
সুয্যি ডোবে - ডোবে।
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে
চাঁদের লোভে লোভে।
মেঘের উপর মেঘ করেছে-
রঙের উপর রঙ,
মন্দিরেতে কাঁসর ঘন্টা।
বাজল ঠঙ ঠঙ।
ও পারেতে বিষ্টি এল,
ঝাপসা গাছপালা।
এ পারেতে মেঘের মাথায়
একশো মানিক জ্বালা।
বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান-
'বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান' ”
দিন কাটিয়ে সন্ধ্যে নামার আগে শহরে ফেরার পথে। বর্ষার এখনও কোন বিরতি নেই। সমস্ত জমে থাকা ভালো লাগা, না শুকোনো জামার মত তিতকুটে। শহরের চারিদিকে জল জল আর জল। তার মধ্য দিয়ে গাড়ি চলছে। জলযানের দুলুনি অকারণ ভীতিপ্রদ হয়ে যায়। আরেক দফা আলাপচারি শেষ হয়, তখন সন্ধ্যে গড়িয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়া সর্ষেদানার মত ভেজা মানুষ, ভেজা ছাতা, ছপ ছপ। ফুটপাথ কোথায়, কোথায় নিকাশি নালা আর কোথায় বা রাস্তা, সব একাকার। তার মধ্যেই হা পিত্যেশ করে ভাড়া-গাড়ির খোঁজ। ফোন-গাড়িরা বেপাত্তা। সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে, অনুনয় করলেও দাঁড়ায় না। শেষে এক বৃদ্ধ ট্যাক্সিওয়ালা রাজি হলেন। আমরা সবে উঠেছি, কোথা থেকে আর একটি লোক দৌড়ে এসে বলল, একটু বড় রাস্তা অবধি নামিয়ে দিন, সামনে অনেক জল। তারপর যানজট জল পার হয়ে আপিস এলাম, রাত তখন আটটা। গাড়িতে ফোন ফেলে নেমে পড়েছি। সেই ট্যাক্সি চালক আবার এসে ফেরত দিয়ে গেলেন। তারপর আপিস করে, এক শহর ভরা জল ডিঙিয়ে, গাড়ি চালিয়ে বাড়ি আসা। গাড়ি ধীরে চলছে। প্রায় দু ঘন্টা লাগল ঘরে ঢুকতে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘুরতে হল অনেক। আটকে যেতে পারতাম, যেকোন জায়গায়। ইষ্টনাম জপতে জপতে ফেরা। রাতের শহরে. সে আরেক রোমহর্ষক অধ্যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন