মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০১৬

ভাই রবীন্দ্রনাথ


ভাই রবীন্দ্রনাথ,

দিন কে দিন, তুমি কিন্তু কেমন একটা হয়ে উঠেছ। যেখানে যাচ্ছি, সেখানে তুমি। কি মুশ্কিল বল দেখি। তোমার জন্য, আর কেউ তো হালে পানি-ই পেল না। সে তোমার সময়কালে হোক বা উত্তরকালে। এটা কিন্তু ভাই তোমার বড্ড এক বগ্গা চাল। আচ্ছা শুধু কি একজনই ব্যাটিং করবে? এই যে তোমায় নিয়ে দুচার বাইট যা হোক লিখছি, তা দেখে তোমার গুণমুগ্ধরা রে রে করে তেড়ে এল বলে। কেউ কেউ আবার নাক সিঁটকিয়ে বলবে, ফুটেজ খাবার জন্য এই অপচেষ্টা। আমি জানি গুরু (দেব), তুমি না বললে কি, বুঝবো না ভাবছো? ওই দেখ, শুরু তে ভাই বলে সম্বোধন করলাম বলে কত শত প্রানে যে ফোস্কা পড়ল, তার আর হিসেব নেই। সেই ছেলেবেলা থেকে তোমার কোটেশান মুখস্থ করে করে চালাচ্ছি। ইস্কুলে মাস্টারবাবু বলতেন, ছেলে রবীন্দ্র জয়ন্তী করছে, কি না নারীসঙ্গ করতে পারবে, সেই জন্য। তা মাস্টারবাবু কিছু ভুল বলতেন না। এই একটু সুন্দরীদের সাথে থাকা যাবে। এক দুবার চিত্রাঙ্গদা বা শ্যামাতে কোরাসে লিপ দিতে পারব। তার জন্য বেশ কিছুদিন রিহার্সাল। একটু রাত বেশী হয়ে গেল, সুন্দরীকে বাড়ী অবধি পৌঁছে দেবার নির্দেশ। আর আমার তেমন শিকে ছেড়েনি হয়তো, কিন্তু কত জনের তো হিল্লে হতে, চোখের সামনে দেখেছি। আরে বাবা অব্যর্থ কেস স্টাডি। তোমার সেই, “একটুকু ছোঁয়া লাগে”। সত্যি বস, মনের মত করে আর কেউ বলল না। কেন বলল না বল তো?

সেই যে ট্রামের সহযাত্রীণী (বানান ঠিক লিখলাম কি?) নিয়ে তুমি অমন করে বললে, “নাম তার কমলা, দেখেছি তার খাতা উপরে লেখা”। আমি ট্রামে তেমন করে চড়ার সুযোগ পাইনি তবে, গল্পটা একঘর। ওমন চিন্তা আমার লোকাল ট্রেন বা বাস, সবেতেই হয়েছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, বুক ঢিপ ঢিপ করছে। মনে হচ্ছে ভীড়ের জন্য গায়ের সাথে চিপ্টে যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে, সেও নিশ্চিত আমার হার্টবিট শুনতে পেল। তারপর যথারীতি একটা স্মার্ট আর চকচকে ছেলের সাথে মালটা কোন বিদর্ভ নগরে হারিয়ে গেল। এই, মাল বললাম বলে রাগ করো না। তোমার মত অত বৈদিক শুদ্ধ আচার কোথায় পাবো? আচ্ছা তুমি বাইক চড়তে? বা সাইকেল? সাইকেল নিয়ে তোমার প্রেম বা প্রশান্তিমুলক কোন লেখা আছে? জানি না তবে, আমাদের সময় এই দুই চক্রযানের মহিমা অপার। তোমার শান্তিনিকেতনেও তো এর প্রভুত প্রচলন। আহা সেই সঙ্গীনী সহকারে সাইকেল নিয়ে খোয়াই বা কোপাই অভিযান। মনে রাখার মতো।

তোমার নাটকে, গল্পে, গানে, কবিতায় তুমি ঘুরে ফিরে অচলায়তন ভাঙার গল্প করেছ। একটু পাশ ফিরলে যারা দোষ ধরে, যারা স্বপ্নেরও প্রায়শ্চিত্য করায়, তাদের কে নিয়ে তোমার অশান্তির শেষ নেই। আবার তোমার গানের সুর নিয়ে, সমাজের জ্যাঠামশাইদের কি দুশ্চিন্তা! সে একবার তোমার গানের সময় জিন্স পরে স্টেজে ওঠার জন্য কি বকুনি যে খেয়ে ছিলাম, কি বলব। আচ্ছা আমি না হয় অর্বাচিন, কিন্তু আজ এত বচ্ছর পরে যদি তোমার গান কেউ জিন্স করে গায়, তাহলে তোমার গানটাই তো জিতে যায়, নাকি? আচ্ছা প্রত্যেক যুগে এই দায়িত্ববান জ্যাঠামশাইরা ঠিক চলে আসেন, কেমন করে?

আমাদের সময়ে বিশেষভাবে ক্ষমতাবান লোককে আমরা ভাই বলি। তারা সবাই সব কিছুর উর্দ্ধে। তাদের ছোঁয়া যায়না কিন্তু তারা বিরাজ করেন। তোমার সম্বন্ধে এরকম একটা অরণ্যদেব মার্কা অনুভূতি হয়। তুমি যেন চলমান অশরীরী। আচ্ছা সেটা ভালো না খারাপ? যাই হোক অনেক গাঁজাগুল্লি গল্প হল, এবার থামি। তুমি আর ঠাকুর হয়ে উঠোনা, প্লিজ। এমনিতেই ন্যাতানো শিরদাঁড়াওয়ালা লোক আমি, তার উপর চতুর্দিকে গুচ্ছের দেবী দেবতার হুঙ্কার। তার মধ্যে তুমিও আবার দেবতা হয়ে গেলে আবার একটা পাঁচালি আর সিন্নির ব্যবস্থা করতে হবে। আজ তবে আসি, মাঝে মঝে পিং করে যাই, ওই আর কি “শুধু যাওয়া আসা শুধু স্রোতে ভাসা”।

ভালো থেকো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ব্লগ এবং বই পাওয়ার ঠিকানাঃ https://souravstory.com

 এখন থেকে ব্লগ সহ অন্যান্য সব খবর এবং বই পাওয়ার ঠিকানাঃ https://souravstory.com