মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০১৬

ভয়ের রঙ

ভয়ের রঙ


স্টেশনের পাশ দিয়ে নির্জন গলিপথ। সেখান থেকে একটু আঁকাবাঁকা গেলে লাল আলোয় দেগে দেওয়া পাড়া। যারা সেখান দিয়ে শর্টকাট করে, তারা জানে। যারা সওদা করতে যায়, তারা তো জানেই। অন্ধকার মাখা ঝুপড়িগুলোতে মানুষের দাম ধরা আছে। আছে আরো অন্যরকম পণ্যের হদিশ। নাড়ু দেড়শো টাকা পিস, দানা দুশো টাকা। দেশি গোপাল বারোশো আর বিলিতি নয় হজার টাকা। বিন্দির দোকানে এই সব সওদাগরেরাও আনাগোনা করে। তারা চা খায়, নির্দোষ বেকারি বিস্কুট। আলাদা করে প্যাকেটও খায় অনেকে। তবে সে সব বিন্দি বিক্রি করে না। লাইনের ওদিকের জঙ্গলের পাশ থেকে আনে। বিন্দি চেনে সবাই কে। কে খোচর, কে পুলিশ, কে এ পার্টি, কে অন্য। কখনো কখনো বেড়া ডিঙিয়ে আসে। বিন্দির সবাই খদ্দের, তাই কারো কোন কথা, কানে বা মনে কোথাও নেয় না। সে জানে এটা তার ব্যাবসা। ওরা আসে বলে দুটো উপরি হয়। মাঝে মধ্যে যখন ভোট আসে তখন বিক্রি বেড়ে যায় তিন চারগুণ। সবার লাভ। দামী পোশাকের বাবুরাও আসে। বিন্দির দোকানের কোণেতে মিটিং হয়। গোপন কথার মিটিং। তখন রোজকার তরকারি বা মাছওলারা এদিক ঘেঁষার সুযোগ পায়না। একটা বুথ দখলে যদি এত টাকার রসদ লাগে। গোটা দেশ দখলে কত খরচ হয়? সেই মুরুব্বিরা কোথায় মিটিং করে? কে তাদের চা জোগায়? যে পার্টি জিতুক, লাভ হয় দানাদারদের।

তবে আজকের গল্পে বিন্দির কেমন ভয় ধরে। মাছ বিক্রি করে যে, তার সাথে ফুলওয়ালার চাবিড়ির সম্পর্ক। কিন্তু আজ কেমন দূরে দূরে বসেছে। ফুল বিক্রি করছিস কর, অন্যদের নিয়ে অমন করে বলার কিছু ছিলনা। ও তো আর সেদেশে গুলি ফোটাতে যায়নি? কিন্তু কেউ যেন চাইছে গন্ডগোলটা বাধুক। যেমন ভোটবাবুরা চায়। বিন্দি বুঝতে পারে। বারুদের যে অনেক দাম। বিক্রি হলেই টাকা। ঘেন্না থেকে রাগ, আর রাগ থেকেই তো আগুন। বেড়ার ওধারেও ধোঁয়া ধোঁয়া লাগে। অঙ্কগুলো বড় সহজ লাগে বিন্দির। এই খবরেই কেমন কাগজ বেশি বিক্রি হচ্ছে। রোজের হিন্দিগানের চ্যানেল না দেখে লোকে খবর দেখছে। সবার রোজগার বেড়ে যাচ্ছে। আরো খবর, তো আরো বিক্রি। লাগিয়ে দিতে পারলেই হল। আর খটাখটির তো অন্ত নেই। জামা আলাদা, ভাষা আলাদা, আদব কায়দা, খাওয়া দাওয়া সব আলাদা। কোন একটার ধুয়ো ধরে ক্ষেপিয়ে তুলতে আর কতক্ষণ! আর ক্ষেপে উঠলেই বিক্রি বাড়বে।

সেদিন টিভিতে রাতের গানের অনুষ্ঠান দেখছিল। কারা জিতবে, সেটা নাকি ঠিক করাই থাকে। কান্নাকাটি ঝগড়াঝাঁটি সে সব নাকি বানানো, মেকি। পাবলিক খায়। আর খেলেই বিক্রি। চা বিক্রি করতে করতে বিন্দি কেমন করে পুরোটা বুঝে ফেলে। দু পক্ষের লড়াইএ একটি তিন নম্বর লোক থাকে, যে সব সাজায় আর লভের টাকা ঘরে তোলে। কিন্তু সমস্যা একটা। জাত, ধম্ম, ভাষা সব আলাদা হলেও রক্তের রঙটা তো এক। সেখানে তো পুরোটাই ঢ্যাঁড়া। বারুদ কি রঙ দেখে পোড়ায়? নিজের চালে লাগতে কতক্ষণ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ব্লগ এবং বই পাওয়ার ঠিকানাঃ https://souravstory.com

 এখন থেকে ব্লগ সহ অন্যান্য সব খবর এবং বই পাওয়ার ঠিকানাঃ https://souravstory.com