বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

রঙের মলাটে কোলকাতা





সমাজের দৈন্যতার প্রতিফলনে, নেতির খবরে ভরপুর থাকে সংবাদ মাধ্যম। তার সাথে যোগ হয় প্রকৃতির আক্রমণ। বানভাসি মানুষের অশ্রুতে শোকের আবহ। পাহাড়ি হতাশার পারদ, মাসের পিঠে মাস পেরিয়ে যায়। অন্যদিকে বাঁশ কাপড়ের মোড়কে ঢাকতে থাকে রাস্তাঘাট। বিজ্ঞাপনের দেখনদারিতে চেনা রাস্তাও অচেনা। 'মুখ ঢেকেছে' অনেককাল, এখন বুঝি ঢাকলো আত্মাও। আপিস ফেরত চাকুরেদের বিরক্তি, ভীড় সামলাতে আইন রক্ষকদের পরিশ্রমের অন্ত নেই। হাসপাতালগুলো কেমন ফাঁকা লাগে।

তারপর, একদিন ভোররাতের আঁধার পার হয়ে শঙ্খধ্বনি হয়। এখন রেডিও লাগেনা, প্রত্যেকের মোবাইলে শোনা যায় সর্বকালের সর্বাধিক জনপ্রিয় বেতার আলেখ্য। দ্রুত পাল্টাতে থাকে শহরের মন। 'পুজোর গন্ধ' কেবল গল্প আর গানেই সীমাবদ্ধ। কংক্রীটের মানচিত্রে 'শিউলি ফুল' হোয়াটঅ্যাপের ছবি মাত্র, আর নীলাকাশ বা সাদা-মেঘের-ভেলা বর্ষার ভ্রুকুটির আন্তরালে। অথচ রক্তের ভেতর কখন যেন চারিয়ে যায় সেই অনুরণন, উৎসবের স্বাদ স্পর্শ করে আপামর বাঙালীকে। যাঁরা দূরে রয়েছেন, তাঁরাও এই চেতনার প্রক্ষেপণে আবিষ্ট হন।

প্রতিদিনের আটপৌরে শহরটা হঠাৎ করে কোন জাদুবলে পাল্টে যায়। কয়েক দশক আগেও যে উৎসব ঘিরে থাকত বারোয়ারি পুজোর চীৎকৃত আড়ম্বর, খুব ধীরে ধীরে তা আজ রূপান্তরিত এক অসামান্য শিল্প আর রুচির যুগলবন্দীতে। গোটা শহর, এক সমবেত শিল্প প্রদর্শনী। যাঁরা 'অপচয়' বলে দেগে দেন, তাঁরা হয়তো তেমন ভাবে দেখেন না, তাই জানেন না। অবহেলিত কাচ শিল্প (অবসর সার্বজনীন দুর্গোৎসব), মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের পট শিল্প (ভবানীপুর রূপচাঁদ সঙ্ঘ), বীরভূমের লাল মাটি (প্রফুল্ল কানন পশ্চিম), লম্ফ কারিগর (বাবুবাগান), বাউল (রাসমনি বাগান কিশোর সঙ্ঘ), বেনারসের পাখি (হাতিবাগান সার্বজনীন) আরও কতশত শিল্পীরা কাজ পেলেন, পেলেন স্বীকৃতি। নিজের শিল্প সত্ত্বাকে মেলে ধরলেন পেন্টার, ভাস্কর, প্রতিমা শিল্পী, আলোক শিল্পী, শব্দ শিল্পী। একই সাথে হাত মিলিয়েছেন ইঞ্জিনীয়ার, সাউন্ড রেকর্ডিস্ট, অলঙ্কার শিল্পী, ফ্যশন ডিজাইনার আরও কত মানুষ। ক্রমে মন্ডপসজ্জাতে ছোঁয়া লাগছে বিমূর্ততার (জোড়াসাঁকো ৭-এর পল্লী, প্রফুল্ল কানন সার্বজনীন, সেলিমপুর পল্লী)। বিশেষ শিশুদের চোখ দিয়ে দেখা এক সংবেদনশীল মানবিক মন্ডপ নলিন সরকার স্ট্রীট। সাধারণের রুচির অভিযোজন শুরু হয়ে গিয়েছে। দেখার চোখ তৈরী হচ্ছে। ধর্মাচারণের সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে এক সৃষ্টির নির্মাণ, শহরকে দিয়েছে নতুন সংজ্ঞার বিবর্তন।



রঙের মলাটে কোলকাতা, রঙ কোম্পানীর হাত ধরে। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় উৎসবে আজ অন্য মাত্রা এসেছে। এই কাজের সাথে যুক্ত প্রত্যেক কর্মীকে ধন্যবাদ। এ বছর সেই দলে সামিল হতে পেরে ভালো লাগল।

ব্লগ এবং বই পাওয়ার ঠিকানাঃ https://souravstory.com

 এখন থেকে ব্লগ সহ অন্যান্য সব খবর এবং বই পাওয়ার ঠিকানাঃ https://souravstory.com