১৮২৮ সালে প্রথম ব্রাহ্মসভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজা রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুর,
রাম চন্দ্র বিদ্যাবাগীস ছিলেন তার মুখ্য আহ্বায়ক। ব্রাহ্ম ধর্ম প্রবর্তন করেন ঋষি
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪৯ সালে। পন্ডিত নবীন চন্দ্র রায় ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা
করেন ১৮৬১ সালে লাহোরে। ঈশ্বর চিন্তা ও সামাজিক পরিমন্ডলে তার বিকাশে নিয়মিত সত্য
ও সুন্দরের চর্চা হত এই সমাজে। তৈরী হয়েছে অসামান্য গান মন্ত্রের আকারে। ঋষি পুত্র
রবীন্দ্রনাথের আবাল্য অনুভব গড়ে ওঠে এই চর্চার অনুষঙ্গে। তাঁর সেই গানের ভান্ডার
থেকে চয়ন করা কয়েকটি ব্রাহ্ম সঙ্গীত।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ গান শুনে মুগ্ধ হয়ে পুত্র রবীন্দ্রনাথ কে পাঁচশত টাকার
একটি চেক পুরষ্কৃত করেন। কবির বয়স তখন পঁচিশ বৎসর। দেবেন ঠাকুর ও তাঁর ব্রাহ্ম
সমাজের জন্য কবি লিখেছেন অজস্র গান। তা মূলত পূজা পর্যায়ের গান রুপে মন্ত্রের মতো
শ্রোতাদের মধ্যে আদৃত। এই গানটিতে সুরারোপ করেন জ্যোতিদাদা।
·
অনেক দিয়েছো নাথ
ত্বমসি মম জীবনং
ত্বমসি মম ভূষণং
ত্বমসি মম ভবজলধিরত্নম
১৯০১ সাল। রবীঠাকুরের কন্যা মাধুরীলতা ও দ্বিতীয়া কন্যা রেনুকার বিবাহ হয় এই
বছরে। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের সাথে পরিচয় ঘটে কবির। নতুন করে বঙ্গদর্শন পত্রিকার
সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহন করেন রবীন্দ্রনাথ। আর এই বছরই শান্তিনিকেতনে পাঁচজন ছাত্র
নিয়ে ব্রহ্মচর্য্য বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এই বছরের লেখা এমন একটি গান,
·
তোমার অসীমে
১৮৮৬ সালে রবীন্দ্রনাথ নাসিক গিয়েছিলেন বেড়াতে। এ বছর তাঁর বউ ঠাকুরানীর হাট
মঞ্চস্থ হয় কলকাতার গ্রেট ন্যাশানাল থিয়েটারে। কলকাতায় কংগ্রসের জাতীয় অধিবেশনে
তিনি নিজে গান শোনান "আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে।" এ বছর শ্রী রামকৃষ্ণ
পরমহংস তিরোহিত হন। সব কিছুর প্রেক্ষাপটে কবির কলমে আসে এই গান।
·
তোমার কথা কেহ তো বলে না
১৯০১ সালে রচিত আরেকটি গান। বঙ্গদর্শন পত্রিকার সম্পাদনার কারনে রবীন্দ্রনাথের
বেশ কিছু রচনা এই পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্য্য আশ্রম রবি
জীবনের এক অন্যতম মাইল ফলক।
·
প্রতিদিন আমি হে জীবন
"সাধারনত আমরা প্রতিদিন
গুটিকয়েক ছোট ছোট কাজ লইয়াই থাকি; মাকড়শার মতো নিজের ভিতর হইতে টানিয়া টানিয়া
আমাদের চারিদিকে স্বার্থের জাল নির্মাণ করি ও স্ফীত হইয়া তাহারই মাঝখানটিতে ঝুলিতে
থাকি; সমস্ত জীবন দৈনন্দিন খুঁটিনাটির মধ্যে সমাহিত হইয়া অন্ধকার ও সংকীর্ণতার
গর্ভে স্বচ্ছন্দসুখ অনুভব করি। আমাদের প্রতিদিন পূর্বদিবসের পুনরাবৃত্তি মাত্র,
আমাদের ক্ষুদ্র জীবন একটি ধারাবাহিক উন্নতির কাহিনী নহে। সেই প্রতি দিবসের
উদরপূর্তি, প্রতিরাত্রের নিদ্রা- বৎসরের মধ্য এই ঘটনা ও ইহারই আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠানগুলিরই তিনশো
পঁয়ষট্টি বার করিয়া পুনরাবর্তন- এই তো আমাদের জীবন, ইহাতে আমাদের নিজেদের প্রতি
শ্রদ্ধা হয়না- অহংকার ও আত্মাভিমানের অভাব নাই বটে, কিন্তু আপনাদের প্রতি যথার্থ
শ্রদ্ধা নাই।"
রাজা রামমোহন
স্মরণে কবি এই লেখা টি পড়েছিলেন ১৮৮৫ সালে। সেই বছরেই কবি পরের গান টি রচনা করেন। কীর্তনাঙ্গে
রচিত এই গানে "এত প্রেম আমি কোথা পাব, নাথ তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।" মাত্র
চব্বিশ বছরের যুবকের বোধের পরিধিতে আলোকিত হয় সমাজ।
·
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
১৮৯৯ সাল, প্রবল ঋণভারে বন্ধ করতে হলো কুষ্টিয়ার ব্যবসা। সেই ঋণ শোধ করতে
লেগেছিল আঠারো বছর। তারই মধ্যে বিসর্জনের মঞ্চায়ন। রঘুপতির ভূমিকায় কবি স্বয়ং।
তাঁর কলম থেমে থাকেনি। একের পর এক প্রকাশ পেয়েছে, কথা ও কাহিনী, কল্পনা, ক্ষণিকা,
ব্রহ্মৌপনিষদ।
আজি প্রণমি তোমারে চলিব নাথ